‘কে টি এম’, মাত্র এই তিনটি শব্দেই অবশেষে জট খুলে গেল হাওড়ার ব্যাঙ্ক কর্মী খুনের। এক বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্মী, পার্থ চক্রবর্তী কে খুন করার পর, তার দেহ ছিন্নভিন্ন করে বিভিন্ন ছাট কাপড়ের টুকরো দিয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছিল। বুধবার দেহ উদ্ধার হওয়ার পর পুলিশ সেই টুকরো টুকরো কাপড়ের মধ্যে থেকেই কে টি এম লেখা একটি হোসিয়ারি সংস্থার স্টিকার পায়। সেই স্টিকারের সূত্র ধরেই এই রহস্যের কিনারা করল পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই স্টিকার সম্বল করে তদন্তে নেমে পুলিশ ডোমজুরে সংশ্লিষ্ট সংস্থার মালিকের বাড়িতে যায়। জানতে পারে ওই হোসিয়ারি সংস্থার মালিক যাঁকে দিয়ে জামাকাপড় তৈরি করান তার নাম সামসুদ্দিন। সেই সূত্র ধরে পুলিশ পৌঁছে যায় সামসুদ্দিনের বাড়িতে। এরপরে একে একে উঠে আসে নানা তথ্য। জানা যায় পেশায় দর্জি, সামসুদ্দিনের স্ত্রী একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য। তার জন্য ব্যাঙ্ক ঋণ নেওয়া হয়েছিল। তা শোধ করা হয়নি। পার্থ চক্রবর্তীর শেষ মোবাইল টাওয়ারও পাওয়া গিয়েছিল সামসুদ্দিনের বাড়ির কাছ থেকেই। দুয়ে দুয়ে চার করে সামসুদ্দিনকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে জেরার মুখে ভেঙে পরে সে। কবুল করে অপরাধের কথা। এই ঘটনায় সামসুদ্দিনের বাবা শেখ মনসুর আলিকেও আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, শামসুদ্দিনের স্ত্রী একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর হয়ে কাজ করতেন। তিনি পার্থবাবুদের ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। কিন্তু টাকা শোধ করছিলেন না। এই নিয়েই সামসুদ্দিনের সঙ্গে কথা বলতে যান ব্যাঙ্ক কর্মী পার্থ চক্রবর্তী। কিন্তু সেই সময় সামসুদ্দিনের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। রাগের বশে পার্থবাবুর মাথায় আঘাত করে সামসুদ্দিন। পুলিশের অনুমান, তথ্য প্রমাণ লোপাটের জন্য এরপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে ফেলা হয় পার্থবাবুর মাথা, হাত, পা।
পুলিশ জানিয়েছে, ২৯ অগস্ট বুধবার পাঁচ জনের থেকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ঋণের টাকা আদায়ে বেরিয়েছিলেন পার্থ চক্রবর্তী। চার জায়গা ঘুরে ৩ লক্ষ টাকা তোলেন তিনি। কিন্তু পঞ্চম জায়গায় যাননি পার্থবাবু। এরপরই তাঁর হাত, পা, মাথা কাটা দেহ বস্তাবন্দি অবস্থায় উদ্ধার হয় মাকড়দহ এলাকা থেকে। যে কাপড় দিয়ে দেহ মুড়ে ফেলা হয়েছিল তার মধ্যে থাকা স্টিকার সম্বল করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ।
মুণ্ডহীন দেহ উদ্ধার হলেও হদিশ মিলছিল না পার্থ চক্রবর্তীর দেহের বাকি অংশের। সামসুদ্দিনকে গ্রেফতারের পর অনেকক্ষণ ধরে জিজ্ঞাসাবাদ চলে। সেখানেই সামসুদ্দিন খুনের কথা স্বীকার করে নেয়। তারপরেই সামসুদ্দিনকে নিয়ে যাওয়া হয় অঙ্কুরহাটিতে, ৬ নং জাতীয় সড়কের ধারে। সেখান থেকেই পার্থবাবুর কাটা হাত-পা উদ্ধার করা হয়। পুলিশ এদিন সামসুদ্দিনের বাড়ি থেকে, ব্যাঙ্কের খোয়া যাওয়া তিন লক্ষ টাকাও উদ্ধার করেছে বলে জানা গিয়েছে।