যারা শপিং করতে ভালোবাসেন, তাঁদের জন্য অনলাইন শপিং অনেকটা আলাদিনের সেই দৈত্যের মতো। যাকে ছাড়া চলেইনা। প্রতিদিন কাজের ফাঁকে, ঘুমোতে যাওয়ার আগে, খাবারের গ্রাস মুখে পুরে একবার করে অনলাইন স্টোর গুলোতে ঢুঁ না মারলে শান্তি নেই। উইকএন্ডের পার্টিতে পরে যাওয়ার রেড ড্রেস, পছন্দের ব্র্যান্ডের নতুন লিপস্টিকের কালেকশন, লেটেস্ট ডিজাইনের স্টিলেটো সবই এখন একটা মাউসের ক্লিকে বা বলা ভালো স্মার্টফোনে আঙুলের ছোঁয়ায় বাড়ির দোরগোড়ায় হাজির। তবে যারা অনলাইন শপিং-এ হাত পাকিয়েছেন, তাঁরা কিন্তু অনলাইন স্টোর থেকে কেনাকাটা করার সময় হাজারটা জিনিস মাথায় রাখেন। আপনিও কি তাঁদের দলে পড়েন। একবার চট করে চোখ বুলিয়ে নিন।
কেনাকাটা করতে বেরোলে আমরা যেমন দশটা দোকান ঘুরে একটা পছন্দের জিনিষ কিনি, অনলাইন শপিং-এর বেলাতেও তাই। কিছু পছন্দ হলে, সেটি আপনার শপিং কার্টে অ্যাড করুন। তারপর অন্য কয়েকটা অনলাইন স্টোরেও চোখ বোলান। হয়তো দেখলেন আগের সাইটে ওই বিশেষ জিনিসটির যা দাম, অন্য একটি সাইটে তার চেয়ে অনেকটাই কম দামে তা পাওয়া যাচ্ছে। আজকাল ফেসবুক বা ইন্সটাগ্রামের মতো সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটেও অনেক কেনাকাটা সংক্রান্ত পেজ আছে। সেই পেজ গুলোতেও ঢুঁ মারতে ভুলবেন না।
কিছু কেনার আগে প্রোডাক্টের ডিটেলস তো দেখবেনই, তার সঙ্গে কাস্টমার রিভিউও ভালো করে পড়ে নেবেন। আগে এই ধরনের জিনিস কিনেছেন এমন কেউ থাকলে তার সঙ্গেও একবার কথা বলে নিন। ভালো করে জুম ইন করে প্রোডাক্টের ছবিটি দেখুন। তারপর ভেবে চিনতে সিদ্ধান্ত নিন কিনবেন কিনা।
পোশাক বা জুতোর মতো যে সমস্ত প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে সাইজের প্রশ্ন রয়েছে, সেক্ষেত্রে সাইজের ডিটেলস দেখে নেওয়াটা মাস্ট। কারণ একই পোশাক, যা একটি সাইটে স্মল সাইজ, অন্য একটি সাইটে আবার সেটি মিডিয়াম সাইজের মধ্যে পড়ে। প্রতিটি সাইটেই একটি ভার্চুয়াল মেজারিং টেপ থাকে। সেখানেই নির্দিষ্ট মাপের উল্লেখ করা থাকে।
কোনও কিছু কেনার পর আপনি যখন জিনিষটা হাতে পেলেন, তখন দেখলেন একেবারেই আপনার মনমতো নয়। তখন তা ফেরত দেওয়া ছাড়া আর উপায় থাকেনা। অতয়েব কেনাকাটা করার আগে ওই নির্দিষ্ট সাইটের রিটার্ন পলিসি সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিন। প্রয়োজনে ওই সাইটের কাস্টমার কেয়ারে কথা বলে এই ব্যাপারে পরিষ্কার হয়ে নিন।
অনেক সময় হাই এন্ড কোনও ব্র্যান্ডের কোনও সামগ্রী- তা পোশাক, ব্যাগ, জুতো যাই হোক না কেন, কোনও অনলাইন সাইট থেকে কেনার আগে ভালো করে যাচাই করে নিন। অনেক সময় এইসব ব্র্যান্ডের নকল বিক্রি হয়। এই ধরনের প্রোডাক্ট বিক্রি করে, এমন সব সাইট থেকেই কিনুন। সব বিখ্যাত ব্র্যান্ডেরই নিজস্ব ওয়েবসাইট আছে। সেখানে গিয়ে ওই বিশেষ প্রোডাক্টটি সম্পর্কে জানুন। অবিশ্বাস্য কম দামে যদি বহুমূল্য ব্র্যান্ডের কোনও প্রোডাক্ট কোনও অনলাইন স্টোর বিক্রি করে, তাহলে বুঝবেন কোনও গলদ নিশ্চয় আছে। এই ধরনের প্রোডাক্ট কেনার আগেও ওই সাইটের রিটার্ন পলিসি সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিন।
সেল শব্দটা শুনলেই তো আমরা অনেকেই স্থির থাকতে পারিনা। আর অনলাইন স্টোরগুলোতে সারা বছরই সেলের উৎসব চলতে থাকে। ফোনে অনলাইন শপিং স্টোরের অ্যাপ ডাইনলোড করা থাকলে, নিত্য নোটিফিকেশন আসে নানা সেলের ব্যাপারে। তাই সেল, ডিসকাউন্ট এই সব ব্যাপারও মাথায় থাকুক কেনাকাটা করার সময়।
শেষে যে কথাটা বলবো তা আপনাদের পছন্দ নাও হতে পারে। কিন্তু তাতে আখেরে আপনার উপকারই হবে। অনলাইন শপিং এখন অনেকের কাছেই একটা নেশার মতো। এর ফলে অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় জিনিসও কেনাকাটা হয়ে যায়। অতিরিক্ত খরচ হয়। ক্রেডিট কার্ডে খরচের সীমাও অতিক্রম করার সম্ভাবনা প্রবল।
তাই কেনাকাটা নিশ্চয় করবেন।তবে সারা মাসের জন্য একটা বাজেট ঠিক করে রাখুন। এবং তার মধ্যেই সীমিত রাখুন আপনার শপিং। এই কায়দাটা রপ্ত করে ফেললে, দেখবেন অনেক ফুরফুরে মনে শপিং করছেন।