ভূতের গল্প এই প্রথম লিখছি, একদম সত্যি কারের ভূত …নিজের চোখে দেখা।লেখার হাতটা খুব একটা ভালো না তাই গা ছমছমে ব্যাপারটা কতটা আসবে জানি না।
সালটা ১৯৯৪ ,শীত কাল, সবে ক্লাস ইলেভেনে উঠেছি….কলেজে ঢুকে পড়াশোনা একদম গোল্লায় উঠেছে,ঘুমোনো আর খাওয়ার সময় ছাড়া বাকি সময়টা গোলাকার বস্তুটিকে নিয়েই কেটে যাচ্ছে।ফুটবলই তখন আমার ধ্যান ঞ্জান।খুব ঠান্ডা পড়েছে, পঁচিশে ডিসেম্বরের ছুটিতে মামা বাড়ি এসেছি বেড়াতে,সঙ্গে জার্সি বুট বল সবই এসেছে।রোজকার মতো সেদিন ও ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ উঠে বল বগলদাবা করে ঢাকুরিয়া লেকের দিকে চলেছি রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামের মাঠে প্র্যাকটিস করব বলে।আমার মামার বাড়ি ঢাকুরিয়ার লিচুবাগানে সেখান থেকে ঢাকুরিয়া স্টেশন ক্রশ করে আরও তিন সাড়ে তিন কিলোমিটার গেলে স্টেডিয়াম।পথে পড়ে লালবাড়ির মাঠ, মাঠটার একটু কুখ্যাতি আছে, নকশাল আমলে নাকি মানুষ মেরে লাশ পুতে দেওয়া হত।তাই রাত বিরেতে ঐ মাঠের পাশ দিয়ে যেতে একটা গা ছমছমে ব্যাপার থাকে সবারই।চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার আর প্রচন্ড ঠান্ডা….ঘন কুয়াশার চাদর মুরে রেখেছে জায়গাটাকে।
আমি ঠান্ডায়ে কাঁপতে কাঁপতে লাল বাড়ির মাঠের পাশ দিয়ে যাচ্ছি,একটা অপার্থিব বাতাবরণ আমার চারপাশে, হঠাৎ দূরে একটা জিনিস দেখতে পেয়ে গা দিয়ে হিমেল স্রোত বয়ে গেল।আমার থেকে প্রায় একশো ফুট দূরত্বে ছয় থেকে সাড়ে ছয় ফুট লম্বা, মানুষেরই গঠনাকৃতি একটা বস্তু, সারা গা ধপধপে সাদা,মাথার চুল গুলো শুধু কালো…নাক মুখ দেখা যাচ্ছে না ভালো করে, হাত পা ছুড়তে ছুড়তে আমারই দিকে এগিয়ে আসছে।আমার হাত পা গুলো যেন অবশ হয়ে যাচ্ছে, ভয়ে আতঙ্কে আড়ষ্ট হয়ে পড়ছে শরীর। আমি যেন আর আমি তে নেই, চিৎকার করার চেষ্টা করলাম দু তিন বার কিন্তু মুখ দিয়ে কোনো আওয়াজ বেরোলো না,শারীরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার সিগনাল গুলো ব্রেনে গিয়ে পৌছাচ্ছে না, ভৌতিক একটা নিঃশব্দতা আমাকে ঘিরে ফেলেছে….শুধু আমার নিঃশ্বাস প্রঃশ্বাসের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি।জানি না সেটার আয়ু আর কতক্ষণ।আমার দিকে ক্রমশ এগিয়ে আসছে সে…আমি শুধু ভাবছি কোন অপদেবতার হাতে আর কি ভাবে আমার প্রাণ টা যাবে।ব্রহ্মদোত্তি আমার ঘাড় মটকাবে নাকি মামদো আমার রক্ত চুষে খাবে? দূরত্বটা কমছে আর আমার চোখের দৃশ্যমান্যতা বাড়ছে, শেষ বারের মতো প্রিয়জনের নামগুলো স্মরণ করছি, দূরত্ব এখন তিন চার ফুট…. স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি মূর্তিমানকে। ছ থেকে সাড়ে ছ ফুট লম্বা বছর চল্লিশের একটা লোক খালি গা..সারা শরীর শ্বেতীতে ভরা , পরনে সাদা ধূতি ,জগিং করতে করতে আর শোলডার এক্সারসাইজ করতে করতে আমার পাশ দিয়ে চলে গেল। এই শীতে খালি গা?? ব্রহ্মদোত্তিই হবে হয়তো, সন্দেহ টা রয়েই গেল আর এখনও আছে।