একটা সর্বভারতীয় হিন্দি টেলিভিশন নিউজ চ্যানেল ও একটি ইংরেজী নিউজ চ্যানেল দিনরাত প্রচার করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। রাজ্য সরকারের ইমাম ভাতা দেওয়া , উর্দুকে সরকারী ভাষার মর্যাদা দেওয়া,মাথা ঢেকে মুসলমান ধর্মের পরব এ যাওয়া, সংখালঘু উন্নয়ন দফতরের বাজেট বাড়িয়ে দেওয়া, হজ টাওয়ার তৈরি করা ইত্যাদির মাধ্যমে নাকি মুসলমান ধর্মের তোষন করা হচ্ছে।
গণতান্ত্রিক দেশে মিডিয়া তার নিজের মতন করে খবর পরিবেশন করতেই পারেন। কিন্তু, সেই খবর পরিবেশনে নিরপেক্ষতার অভাব যদি সামাজিক অস্থিরতার সৃষ্টি করে তাহলে তার প্রতিবাদ হওয়া উচিত সমাজের সর্বস্তর থেকে।
আসলে খুব সন্তর্পণে সর্বভারতীয় মিডিয়ার মাধ্যমে সারা ভারতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এইধরনের একপেশে উদ্দেশ্যমূলক মিথ্যা প্রচার করে চলেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিরোধী জোটে নিঃসঙ্গ করে দেওয়া এবং বাংলার মাটিতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে অশান্তি সৃষ্টির মাধ্যমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাংলায় ব্যস্ত রাখার জন্যই যে এই নোংরা খেলা শুরু হয়েছে পেইড মিডিয়ার মাধ্যমে। এটা আজ জলের মতন পরিষ্কার।
নরেন্দ্র মোদীর সরকারের কাজকর্ম নিয়ে সাধারণ ভারতবাসীর মোহ এত দ্রুততার সাথে নষ্ট হচ্ছে প্রতি মূহুর্তে যে যেকোনো সময় তা সারা দেশে বিদ্রোহের আকার নিতে পারে এটা বি জে পি বুঝে গেছে। আর এই মূহুর্তে একটা বড় অংশের ভারতবাসীর কাছে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিরোধী জোটের সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বের নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই নিশানাও অভ্রান্ত, সবার আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যে কোনো উপায়ে নিষ্ক্রিয় করে দিতে হবে। আর সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই “ম্যালাইন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়” অপারেশনের মধ্যে দিয়ে মমতাকে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক ও বাংলাকে অশান্ত করে দিয়ে ওকে বাংলায় ব্যাস্ত করে রাখার যুগলবন্দী ঘৃন্য ষড়যন্ত্র।
মুসলমানদের তোষনের কথা প্রচার করার সাদে সাথে কেনো একবারের জন্যও বলা হচ্ছে না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের এই সাত বছরে ‘হিন্দু তোষণের’ কথা।
১. কপিল মুনির আশ্রম সংস্কার ও সাগরের মেলার স্থায়ী পরিকাঠামো নির্মাণে ২৫০ কোটি টাকা কেনো খরচ করা হলো? প্রতি বছর মেলার সরকারী বাজেট লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে কেনো?
২. গঙ্গা সাগর মেলায় আগত পুর্নাথ্যীদের থেকে তীর্থ কর কেনো তুলে নেওয়া হলো?
৩. সারা রাজ্য জুড়ে হিন্দুদের শশ্মান গুলির পরিকাঠামো উন্নয়নে কেনো এত কোটি কোটি টাকা খরচ করে “বৈতরনী” প্রকল্প চালু করা হলো?
৪. কেনো দূর্গা পূজোর সময় ১০ দিন সরকারী ছুটি দেওয়া হবে?
৫. কেনো ভারত সেবাশ্রম সংঘ ও রামকৃষ্ণ মঠ কিম্বা মিশন কে কোটি কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হয় প্রতি বছর?
৬. কেনো দূর্গা প্রতিমার শোভা যাত্রা হবে সরকারী পয়সায়?
৭. কেনো সরকারী পয়সায় দূর্গা পূজোর আয়োজক সংস্থাদের দের পুরস্কৃত করা হবে?
৮. কেনো গরীব হিন্দুদের দাহ করার খরচ বইবে সরকার “সমব্যাথী” প্রকল্পের মাধ্যমে?
৯. কেনো তারকেশ্বর , তারাপীঠ, কালনা , নবদ্বীপ, মায়াপুর সহ এ রাজ্যের হিন্দু তীর্থ স্হানগুলির উন্নয়নে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হবে?
১০. কেনো ইস্কন, দখিনেশ্বর, কালীঘাট মন্দিরের সংস্কারে রাজ্য সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করবে?
এ রাজ্যের ৩০% মুসলিম করদাতাদের টাকায় কেনো সংখাগুরু তোষন হবে?
না, এগুলো প্রচার করা যাবে না, কারন এগুলো সবাই জানলে তো সংখাগুরু সাধারণ হিন্দু বাঙালীদের কাছে গেরুয়া শিবিরের সব ধান্দাবাজী প্রকাশ হয়ে যাবে।
হিন্দুদের ধর্মীয় ভাবাবেগে সুড়সুড়ি দিয়ে তাদের আর মমতার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলা যাবে না।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা করেছেন তা সমাজের সার্বিক উন্নতির জন্য করেছেন, সমাজের কোনো এক শ্রেনীর উন্নয়নের মধ্যে দিয়ে সমাজের সার্বিক উন্নয়ন হয় না আর তার ফল সমগ্র সমাজকেই ভুগতে হয়। ব্যাপক অর্থে এটা বামফ্রন্ট সরকার বুঝেও না বোঝার ভান করে শুধুমাত্র “রেশন কার্ডের বিনিময়ে ভোট” এই বন্দোবস্তের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের সামাজিক বিন্যাসে ২৭ শতাংশ মুসলমান সমৃদ্ধ সমাজের সার্বিক উন্নয়নের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ছিলো। তাতে করে সংখাগুরু হিন্দুরা খুশ ছিলো, আর রেশন কার্ডের ললিপপ নিয়ে মুসলমানেরাও হাসি মুখে ভোটের লাইনে দাড়িয়ে সিপিএমকে ভোট দিয়ে বছরের পর বছর কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছে। ক্ষতিটা হয়ে গেছে বাংলার সমাজের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেড়ালের গলায় ঘন্টা বেধেছেন। নিজে সমস্যার গভীরে গিয়ে উপলব্ধি করেছেন। এবং নিজের মতন করে ব্যাঙ্গ বিদ্রুপ উপহাসের নির্ভেজাল নামাবলী নিজের গায়ে নিয়ে এই জটিল ও কঠিন সমস্যা থেকে বাংলাকে মুক্ত করার পথ খুজে নিয়েছেন, যার সুফল সময়ে বাংলার মানুষ বুঝতে পারবেন।
আর এই জায়গাতেই গেরুয়া শিবিরের ভয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে। তারা তাই বাংলার অবাঙালী অধ্যুষিত জায়গাগুলিতে নিজেদের পেটোয়া লোকজন আমদানী করে অশান্তির আবহাওয়া সৃষ্টি করতে চাইছেন,যাতে করে এক ঢিলে তিন পাখি মারা যায়। বিভেদের রাজনীতির সাফল্যে বাংলায় নিজের ভোট ব্যাঙ্ক বৃদ্ধি, সারা দেশে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি হওয়ার ফলে উদ্ভুত চরম প্রতিকূল অবস্থা থেকে মানুষের মন ঘুরিয়ে দিয়ে নমোর ব্যার্থতা লুকোনো এবং সারা ভারতে নমোর বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিবাদী মুখ হয়ে ওঠা যেনতেন প্রকারে আটকানো।
বাংলার সাধারণ মানুষ বিচার করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলার প্রতি দায়বদ্ধতা, আন্তরিকতা এবং কর্তব্যপরায়ণতার। কিন্তু দয়া করে গেরুয়া শিবিরের এই ঘৃন্য ষড়যন্ত্রের শরিক হয়ে বাংলার সর্বনাশ করবেন না। হিন্দু, মুসলিম, শিখ, ইসাই সমস্ত বাংলাবাসীর কাছে অনুরোধ রইলো।
শুধুমাত্র নিজেদের পছন্দের বড় বড় ব্যাবসায়ীদের সুবিধা করে দিতে যারা ১৩০ কোটি সাধারণ ভারতবাসীর দৈনন্দিন জীবন উথাল পাতাল করে দিতে পারে, মানুষের মৃত্যুকে বাজী রাখতে পারে, দেশের কোটি কোটি গরীব শ্রমিকের পেটে লাথি মারতে পারে, সেই রাজনৈতিক দলের গোপন এজেন্ডার শরিক হয়ে তাদের আপনার আমার সামনে জবাবদেহী করা থেকে পালানোর সুযোগ করে দেওয়া একবারে ঠিক হবে না।
ধর্মকে হাতিয়ার করে স্বাধীনতার পর দেশের সবচেয়ে বড় ঘোটালা “নোট-ঘোট” থেকে নমোর বাঁচার পথ খুজে নেওয়ার এই ঘৃন্য ষড়যন্ত্র থেকে নিজেদের দূরে রাখুন। আমার আপনার সবার ভালোর জন্য।
আসুন সাদা কে সাদা আর কালোকে কালো বলি। আসুন বাংলার ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রাখি। আসুন বাংলার উন্নয়নকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাই।
( মতামত লেখিকার ব্যক্তিগত )