আগামীকাল বুধবার বিকেল পাঁচটার মধ্যেই সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে হবে ফডনবিশ সরকারকে। গোপন ব্যালটে আস্থা ভোট হলে চলবে না। করতে হবে লাইভ ফ্লোর টেস্ট। মঙ্গলবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের এই রায়েই কেঁপে গিয়েছিল মহারাষ্ট্রের ফডনবিশ সরকারের ভিত। এরপর যখন আস্থাভোটের তোড়জোড় চলছে, ঠিক তখনই চরম ধাক্কাটা এল অজিত পাওয়ারের দিক থেকে। উপ মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে শরদ-ভাইপোর ইস্তফাটাই যেন ছিল ফডনবিশ সরকারের কফিনে শেষ পেরেক। অবশেষে আর উপায় নেই দেখে এবার ইস্তফা দিলেন স্বয়ং দেবেন্দ্র ফডনবিশও। যার ফলে আস্থাভোটের আগেই মাত্র ৪ দিনের মাথায় পতন হল ফডনবিশ সরকারের।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার আচমকা মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর পদে শপথ নেন বিজেপির দেবেন্দ্র ফড়নবিশ। সেই সঙ্গে উপমুখ্যমন্ত্রীর পদে শপথ নেন অজিত পাওয়ার। তিনি জানান, এনসিপির ৫৪ জন বিধায়ক বিজেপিকে সমর্থন করছেন। সোমবার রাতে অবশ্য বিরোধী শিবসেনা, এনসিপি ও কংগ্রেস জোট মুম্বইয়ের এক হোটেলে ১৬২ জন বিধায়ককে হাজির করায়। যাতে রীতিমতো চাপে পড়ে যায় বিজেপি। এদিন সুপ্রিম রায়ের পড়ও বড়সড় ধাক্কা খায় তারা। আর তারপর দুপুরেই আচমকা উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন অজিত পাওয়ার। তখনই মিলে গিয়েছিল ইঙ্গিত। এরপর বিকেল সাড়ে তিনটেয় সাংবাদিক বৈঠক করবেন বলে যখন ফডনবিশ জানান, তারপর থেকেই এই জল্পনা শুরু হয়ে যায় যে, সাংবাদিক বৈঠকের পরেই রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপাল ভগৎ সিং কোশিয়ারির সঙ্গে দেখা করে ইস্তফা দিয়ে দিতে পারেন দেবেন্দ্র।
এবার সমস্ত জল্পনাকে সত্যি করে সাংবাদিক বৈঠকেই ফডনবিশ জানিয়ে দিলেন, ইস্তফা দিতে চলেছেন তিনি। সংবাদমাধ্যমের সামনে ফডনবিশ বলেন, আমরা ঠিক করেছি বিরোধী আসনে বসব। গঠনমূলক বিরোধিতা করব ও মানুষের কল্যাণের জন্য লড়াই করব। তিনি এ-ও জানান, এদিন সকালে অজিত পাওয়ার তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। তাঁর কথায়, অজিত দাদা জানান তিনি ইস্তফা দিতে চান। সুতরাং অজিত দাদার ইস্তফার পর আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করা সম্ভব নয়। তাই এই সাংবাদিক বৈঠকের পরই আমি রাজ্যপাল ভগৎ সিংহ কোশিয়ারির সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি। তাঁর সঙ্গে দেখা করে ইস্তফা পত্র পেশ করে দেব। শিবসেনা বিজেপির কাঁধে চেপে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর পদ দখল করতে চেয়েছিল বলেও অভিযোগ করেন ফডনবিশ।
বিজেপির শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষণার পর পরই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী তথা বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। তার পর ওই বৈঠক থেকেই অমিত শাহ কথা বলেন দেবেন্দ্র ফড়নবিশের সঙ্গে। বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, দেবেন্দ্রকে ইস্তফা দেওয়ার জন্য তখনই ইঙ্গিত দিয়ে দিয়েছিলেন অমিত শাহ। প্রশ্ন হল, কেন আস্থা ভোট পর্যন্ত গড়াল না গোটা পর্ব। কেনই বা অজিত পাওয়ার আগে ভাগে ইস্তফা দিয়ে দিলেন। পর্যবেক্ষকদের মতে, কারণটা স্পষ্ট। একমাত্র অজিত পাওয়ার ছাড়া যে কেউ তাদের সঙ্গে নেই, গতকাল গ্রান্ড হায়াতে বিরোধী জোটের ‘মেগা শো’তেই তা টের পেয়ে গিয়েছিল বিজেপি। ফলে আস্থাভোটে হার অনিবার্য বুঝে মুখ পোড়ার আগেই পিছু হটল তারা।