এ রজ্যের মত মহারাষ্ট্রের রাজ্যপালের বিরুদ্ধেও সাংবিধানিক পদের অপব্যবহার ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার তোয়াক্কা না করে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের অভিযোগ উঠেছে। সংসদে এ নিয়েই মোদী সরকারকে কোণঠাসা করতে তৃণমূল নেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শে এককাট্টা হয়েছে বিরোধী শিবির। মমতার পরিকল্পনা মতই সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বে সংসদ ভবনে বি আর আম্বেদকর মূর্তির সামনে ধর্নার কর্মসূচী নিয়েছে বিরোধী শিবির। এমনকী সেন্ট্রাল হলে আয়োজিত রাষ্ট্রপতির সভাপতিত্বে বিশেষ অনুষ্ঠান বয়কট করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস, তৃণমূল, এনসিপি, শিবসেনা, ডিএমকে, সপা, আরজেডি-সহ সমস্ত বিরোধীরা।
প্রসঙ্গত, আজ সংবিধান দিবস। তাই এই বিশেষ দিনেই সংবিধান প্রণেতার মূর্তির সামনে ধর্নায় বসে সংবিধান সুরক্ষার দাবি জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিরোধীরা। এই অভিনব প্রতিবাদের নেপথ্যে যে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, তাঁর পরিকল্পনা অনুসরণ করেই সরকার বিরোধী এই ধর্নার আয়োজন করেছে কংগ্রেস, সে কথা জানিয়েছে খোদ বিরোধী শিবিরই। রাষ্ট্রপতি সংসদের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন আজ, মঙ্গলবার৷ সেই ভাষণ শুরুর আগেই বিরোধী দলগুলি একজোট হয়ে ধর্নায় বসবে। এর পরে সম্মিলিত সিদ্ধান্তে মঙ্গলবারের যৌথ অধিবেশন বয়কট করতে পারে বিরোধীরা৷
তৃণমূল সূত্রের খবর, বাংলার রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের তথাকথিত ‘এক্তিয়ার বহির্ভূত’ আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে তাঁরা যে ধর্নায় বসতে চলেছেন সংবিধান দিবসের দিনেই, সেই খবরটি জানানো হয়েছিল কংগ্রেসের দুই প্রভাবশালী সাংসদ আহমেদ প্যাটেল ও গুলাম নবি আজাদকে৷ তাঁরাই খবরটি পৌঁছে দেন কংগ্রেস হাইকমান্ডের কাছে৷ এর পরেই কংগ্রেসের শীর্ষ স্তরে সিদ্ধান্ত হয় মহারাষ্ট্রে সরকার গঠনের ক্ষেত্রে রাজ্যপাল ভগত সিং কোশিয়ারির ভূমিকার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে মঙ্গলবার সকালে ধর্না হবে৷ এই ধর্নায় যাতে তৃণমূলও অংশগ্রহণ করে তার জন্য ব্যক্তিগত ভাবে উদ্যোগী হন সোনিয়া গান্ধী৷
জানা গেছে, কংগ্রেস নেত্রী নিজেই এগিয়ে এসে তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধর্নায় থাকার জন্য অনুরোধ করেন৷ সুদীপ তাতে সম্মতিও দেন৷ সুদীপের কথায়, ‘আমি ওঁকে জানাই, আমাদের দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই এমন একটি কর্মসূচীর কথা আমাদের জানিয়েছিলেন, যেখানে বাংলার রাজ্যপালের এক্তিয়ার বহির্ভূত আচরণ নিয়ে ধর্নায় বসার কথা ছিল মঙ্গলবার৷ এখন কংগ্রেস একসঙ্গে ধর্নায় বসতে চাইছ। আমরাও তাতে সামিল হব৷ মহারাষ্ট্রের রাজ্যপালের পাশাপাশি বাংলার রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়েও সোচ্চার হব আমরা৷’
সুদীপ ভুল কিছু বলেননি। কারণ যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোতে কেন্দ্র-রাজ্য সুসম্পর্কের মাধ্যমে দেশের সংবিধান সুরক্ষার দায়িত্ব যাঁর কাঁধে অর্পিত থাকে, সেই রাজ্যপালের ভূমিকা কী হওয়া উচিত, তা নিয়ে বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই সোচ্চার ছিল তৃণমূল৷ বাংলার রাজ্যপাল যে তাঁর এক্তিয়ার মেনে কাজ করছেন না, তৃণমূলের তরফে এই অভিযোগ তোলা হয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারের ডাকা সর্বদল বৈঠকেও৷ এবার মমতার দলের সুরে সুর মিলিয়ে মহারাষ্ট্রের সরকার গঠনের ক্ষেত্রে রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে সর্বভারতীয় স্তরে বড়সড় আন্দোলনের পথে হাঁটতে চলেছে কংগ্রেস-সহ দেশের প্রায় সকল বিরোধীরা।