গত সপ্তাহেই উত্তরবঙ্গ সফরে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। তবে সেই সময় প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আছড়ে পড়ে দক্ষিণবঙ্গে। তাই বাধ্য হয়ে উত্তরবঙ্গ সফর বাতিল করেছিলেন তিনি। তবে বুলবুলের প্রকোপ কাটতেই সোমবার কোচবিহারে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানের প্রশাসনিক বৈঠক সেরে মঙ্গলবার দুপুরে তাঁর গন্তব্য ছিল গঙ্গারামপুর। এখানেই এই সফরের দ্বিতীয় প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। আর সেই বৈঠকেই দক্ষিণ দিনাজপুরে সরকারি কাজকর্ম অত্যন্ত শ্লথ গতিতে হচ্ছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন তিনি। কাজে অজস্র খামতি দেখেই কড়া ধমক দিলেন জেলাশাসক নিখিল নির্মলকে। সেইসঙ্গে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে সব বিভাগের কাজ যাতে ১০০ শতাংশ শেষ হয়ে যায়, বারবার সে সম্পর্কে কড়া বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
https://www.facebook.com/ekhonkhobor18/videos/998569983811037/
মুখ্যমন্ত্রী লক্ষ্য করেছেন ১০০ দিনের কাজে অনেক পিছিয়ে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা। জল ধরো, জল ভরো-সহ একাধিক জনকল্যাণমূলক প্রকল্পে পারফরম্যান্স খারাপ। মঙ্গলবার গঙ্গারামপুরে জেলার আধিকারিকদের সঙ্গে প্রশাসনিক বৈঠকে তাই এরই কৈফিয়ত চাইলেন তিনি। নিজেই হতাশার সুরে বললেন, ‘কাজই হয়নি, তো কাজের কী খতিয়ান নেব?’ বিরক্তি প্রকাশ করেই প্রশ্ন করেন, ‘কাজে স্বাধীনতা পেয়েছো, পরিকাঠামো পেয়েছো। তাও কেন কাজ হয়নি? মৎস বিভাগ কী করছিল? কেন ঠিকমতো মাছ চাষ হয়নি? তপনে জলপ্রকল্পের কাজ এতদিন আটকে আছে কেন?’ জেলাশাসকের কাছেই এসবের উত্তর চান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর উত্তরে সন্তুষ্ট না হয়ে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে ভর্ৎসনা করেন। বিভিন্ন কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কেন শেষ হয়নি, তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কাজের দায়িত্বপ্রাপ্তদের প্রত্যেকেরও জবাব তলব করেন তিনি।
উপস্থিত সকলকে উদ্দেশ্য করেই তিনি বলেন, ‘সরকারের একটা সীমিত সময় আছে। তার মধ্যেই কাজ শেষ করতে হয়। জনগণ কাজ না পেলে তোমাদের নয়, আমাকেই এসে বলবে। কাজ ফেলে রাখা চলবে না। ফেলে রাখলে, ব্যবস্থা নেব।’ এরপরই সচিবদের তিনি নির্দেশ দেন, ‘এঁদের তো ঠিকমতো ট্রেনিংই হয়নি। কী করে এঁরা জনগণকে বলবেন? এঁদের শিবির করে ঠিকমতো প্রশিক্ষণ দিন।’ জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি বিভাগের পারফরম্যান্স দেখেও বেশ অসন্তুষ্ট মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, কোনও নেতিবাচক মানসিকতা থাকলে কাজই হবে না। কাজ করতে হবে, এই মনোভাব থাকলেই সব ঠিকমতো করা সম্ভব। জেলাশাসককে ফের বলেন, ‘একা একা কিছু হয় না। সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হবে। কাজ না হলে আমি কিন্তু কাউকে ছেড়ে কথা বলব না।’
উল্লেখ্য, এনআরসির আশঙ্কায় তটস্থ সীমান্তবর্তী জেলাগুলির মানুষজন। এই পরিস্থিতিতে পরিচয়পত্র হিসেবে আধার কার্ডের আবেদন ফেলে রাখার অভিযোগ কানে পৌঁছেছে মুখ্যমন্ত্রীর। তিনি সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের এ নিয়ে চূড়ান্ত ভর্ৎসনা করে বলেন, ‘কেন এটা ফেলে রাখা হচ্ছে? এটা মানুষের পরিচয়ের ব্যাপার, জীবন-জীবিকা জড়িয়ে রয়েছে। দ্রুত আবেদনগুলি দেখে আধারের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।’ এরপর জেলাবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেন, ‘যারা জন্মসূত্রে এখানকার বাসিন্দা, তাদের কাউকে বাদ দেওয়া যাবে না। উদ্বাস্তুরাও নাগরিক। অযথা এনআরসি নিয়ে ভয় পাবেন না। ওদের কথা বিশ্বাসও করবেন না। এখানে এভাবে এনআরসি করা যাবে না।’