নোটবন্দীর পর দেশের অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান তো হয়ইনি। বরং কাজ হারিয়েছেন অনেকেই। এবার এ কথা মেনেই নিল কেন্দ্রের মোদী সরকার। গতকাল তৃণমূল সাংসদ মালা রায়ের এক প্রশ্নের লিখিত জবাবে তথ্য-সহ একথা স্বীকার করে কেন্দ্রীয় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী সন্তোষকুমার গাঙ্গোয়ার জানিয়েছেন, ফি বছর অসংগঠিত ক্ষেত্রে গড়ে ৩-৪ শতাংশ মানুষ কাজ হারিয়েছেন।
সোমবার তৃণমূল সাংসদ মালা রায় কেন্দ্রীয় শ্রম ও কর্মসংস্থান রাষ্ট্রমন্ত্রী (স্বাধীন) সন্তোষকুমার গাঙ্গোয়ারের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, গত ৩ বছরে অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত মানুষের কাজে নোটবন্দীর কি প্রভাব পড়েছে? লিখিত জবাবে মন্ত্রী জানিয়েছেন, পরিসংখ্যান ও কর্মসূচী রূপায়ণ এবং পরিকল্পনা মন্ত্রকের অধীনস্থ ন্যাশনাল সার্ভে অফিস কর্তৃক ২০১৭-১৮ সালে পিএলএফএস (পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভে) অনুযায়ী অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মীর হার ছিল ৬৮.৪ শতাংশ।
এই সমীক্ষার পর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রক কর্তৃক ১৫ বছর বয়সিদের ঊর্ধ্বে বার্ষিক কর্মসংস্থান-বেকারত্ব সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে, ২০১৩-১৪ সালে কর্মসংস্থানের হার ছিল ৫৩.৭ শতাংশ। ২০১৫-১৬ সালে তা কমে হয়েছে ৫০.৫ শতাংশ। এবং ২০১৭-১৮ বর্ষে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪৬.৮ শতাংশ। যদিও মন্ত্রী উল্লেখ করেছেন দুটি ভিন্ন মন্ত্রকের সমীক্ষার পদ্ধতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। কিন্তু, এখানেই প্রশ্ন উঠছে ঘুরিয়ে নাক ধরার চেষ্টা করা হলেও কেন্দ্রীয় সরকার মেনে নিয়েছে গত ৩ বছরে ক্রমান্বয়ে দেশে অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান ব্যাপক হারে কমেছে।
দেশে অর্থনৈতিক শ্লথগতির প্রকৃত কারণ কি তিন বছর আগের নোটবন্দী নয়? এই প্রশ্নে দৃশ্যতই অস্বস্তিতে পড়েছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থ ও কর্পোরেট বিষয়ক রাষ্ট্রমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। কোনওমতে মূল প্রশ্ন এড়িয়ে জবাব দিলেন মন্ত্রী। লোকসভায় বিরোধী শিবির থেকে যখন একে একে ধেয়ে এসেছে এমনই নানা প্রশ্ন, তখন অনুরাগ সাফাই গেয়ে বলেন, শুধু ভারতে নয়, গোটা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। উন্নত দেশগুলির জিডিপি হার সাড়ে ৩ শতাংশের কাছাকাছি। এত সত্ত্বেও ভারতের জিডিপি হার দ্রুত অগ্রগতির দিকে এগোচ্ছে।
গতকালের প্রশ্নোত্তর পর্বে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় এই অভিযোগ করেন যে, ‘এ দেশে শিল্পোৎপাদনের হার কমেছে। অর্থনীতি ধুঁকছে। এসব জানতে চাইলেই সরকার জম্মু-কাশ্মীর এবং রাম মন্দির দেখিয়ে দিচ্ছে।’ তিনি জানতে চান, অর্থনৈতিক শ্লথগতির মূল কারণ কি নোটবন্দী? কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর জবাব, ‘নোট বাতিল করে সাহস দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তারপর কালো টাকা কমেছে। তৃণমূল না মানলেও করদাতার সংখ্যা বেড়েছে।’
ঘটনাচক্রে, সোমবারই ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকার সম্পাদকীয়তে দেশের অর্থব্যবস্থা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছেন মনমোহন। লিখেছেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক শ্লথগতির ফলে সামাজিক কাঠামো ভেঙে পড়ছে। মোদির উচিত শিল্পপতি ও উদ্যোগীদের প্রতি সমাজের গভীর সন্দেহ দূর করা।’ তাঁর লেখায় উঠে এসেছে অর্থনৈতিক দুরবস্থার প্রভাবে বিগত ১৫ বছরে সবচেয়ে কম জিডিপি, ৪৫ বছরে সবচেয়ে বেশি বেকারত্ব এবং চার দশকের সর্বনিম্ন সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার প্রসঙ্গ।