২০১৭-১৮ সালের অল ইন্ডিয়া সার্ভে অন হায়ার এডুকেশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, গোটা ভারতবর্ষে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গড় ভর্তির হার (গ্রস এনরোলমেন্ট রেশিয়ো) হল ২৫.৮ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতিবছর ১০০ জন ছাত্র-ছাত্রী উচ্চমাধ্যমিক পাশ করলেও তার মাত্র ২৬ জন উচ্চশিক্ষার দিকে যাচ্ছেন, আর বাকি ৭৪ জন বঞ্চিত হচ্ছেন উচ্চশিক্ষা থেকে। সুতরাং, এআইএসএইচই-র রির্পোট অনুযায়ী বলা যেতে পারে যে, একটা বিশালসংখ্যক ছেলেমেয়ে প্রতিবছর উচ্চশিক্ষার আওতার বাইরে থেকে যাচ্ছেন।
এই যে বিশালসংখ্যক পড়ুয়া উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, এর বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। যেমন, ১. পর্যাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাব, ২. বাড়ি থেকে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান দূরবর্তী হওয়া, ৩. অচেনা পরিবেশে মানিয়ে না নেবার ক্ষমতা, ৪. পারিবারিক অর্থনৈতিক কারণে অন্য কোনও কাজে ঢুকে যাওয়া, ইত্যাদি। কিন্তু দেখা গিয়েছে, বেশিসংখ্যক ছেলেমেয়ের উচ্চশিক্ষার দিকে না যাওয়ার মূল কারণ হল, পর্যাপ্ত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাব। শহরগুলির তুলনায় গ্রামগুলিতে এই সমস্যা সবচেয়ে বেশি। বর্তমান সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে শিক্ষার হার বাড়ছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, শিক্ষার হার বাড়লেও উচ্চশিক্ষার হার কিন্তু এই এলাকাগুলিতে বাড়ছে না। মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিকের পর বাধ্য হয়ে পড়া ছেড়ে দিচ্ছেন এই প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকার মেধাবী ছেলেমেয়েগুলি।
দেখা যায়, প্রতিটি গ্রামে প্রাইমারি বা মাধ্যমিক স্কুল থাকলেও উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি দিতে হয় ২০ অথবা ২৫ কিমি দূরবর্তী কোনও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। যার ফলে ইচ্ছা থাকলেও উচ্চশিক্ষার কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিজ এলাকাতে না থাকায় উচ্চশিক্ষা থেকে প্রতিবছর বঞ্চিত হচ্ছেন কয়েক লক্ষ পড়ুয়া। পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতেও এই সমস্যা কম বেশি একই রকমের। এই সমস্যার সমাধান করতে গেলে পশ্চিমবঙ্গের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। সবার প্রথমে উচ্চশিক্ষার জন্য দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। সাধারণ ঘরের ছেলেমেয়েরা যাতে সবাই উচ্চশিক্ষার আওতায় আসতে পারেন, তার জন্য উচ্চশিক্ষা পড়ানোর ব্যবস্থা আরও সরলীকরণ করা দরকার। এজন্য বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে আমরা যেটা ভাবতে পারি, তা হল, পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যদি উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করা যায়, তা হলে প্রতিটি পড়ুয়া অতিসহজেই উচ্চশিক্ষার পাঠ নিতে পারবেন। এর ফলে একদিকে যেমন পড়ুয়াদের দূরবর্তী স্থানে যাওয়ার জন্য সময়ের অপচয় কম হবে, তেমনই অপরদিকে যাওয়া-আসা বাবদ খরচের সাশ্রয় হবে। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে যে, গোটা পশ্চিমবঙ্গের এত স্কুলে কি উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করা সম্ভব? এটি সময়সাপেক্ষ হলেও অসম্ভব নয়, কারণ একটা উচ্চমাধ্যমিক স্কুল থেকে গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ জন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়। এই পড়ুয়াদেরকে নিজ নিজ স্কুলে উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য একটা ন্যূনতম পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। যার জন্য সাধারণ পড়ুয়াদের কথা ভেবে পশ্চিমবঙ্গের পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে দু’টি ভাগে ভাগ করা প্রয়োজন। এজন্য প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাইমারি সেকশনে রাখা হোক আর নবম শ্রেণি থেকে গ্রাজুয়েশন পর্যন্ত পড়ানো হোক উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিতে।