মঙ্গলবার বেলা ১১টা নাগাদ বিজয়া দশমীর উচ্ছ্বাসের মধ্যেই জিয়াগঞ্জ শহরে লেবুবাগানে বাড়ির ভেতর থেকে ঢুকে খুন করা হয় প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল, তাঁর সন্তানসম্ভবা স্ত্রী বিউটি মণ্ডল পাল ও তাঁদের ৬ বছরের ছেলে বন্ধুঅঙ্গন পালকে। এই ঘটনা শোরগোল ফেলে দেয় গোটা বাংলায়। ঘটনার পর থেকেই বিজেপি দাবি করেছিল নিহত ওই শিক্ষক আরএসএস করতেন বলে তাঁর এই পরিণতি। কিন্তু পুলিশ প্রথম থেকেই বলে এসেছিল এই খুন পারিবারিক বিবাদের কারণে। তাঁদের কথাই সত্যি হয়েছে, গতকাল গ্রেফতার হয়েছে মূল অভিযুক্ত রাজমিস্ত্রী উৎপল। বিমার টাকা নিয়ে ঝামেলার জন্যেই এই খুন বলে জানা গেছে। এর জেরে আরও ব্যাকফুটে বিজেপি। যে কোনও ঘটনাতেই রাজনীতির রঙ লাগানোর যে অপচেষ্টা তা ব্যর্থ। এর জেরে ফের অস্বস্তিতে বিজেপি।
ঘটনার পর থেকেই বিজেপি যেভাবে বন্ধুপ্রকাশকে নিজেদের কর্মী বলেছে, তাতে বিজেপির ওপর চরম ক্ষুব্ধ এলাকার বাসিন্দারাও। তাঁদের অভিযোগ, মৃত্যু নিয়ে বিজেপি অহেতুক রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। তৃণমূল, সিপিএম, কংগ্রেস- প্রতিটি রাজনৈতিক দলই যখন এ নিয়ে বিজেপির তীব্র সমালোচনা করছে, তখন মৃতের গ্রামের বাড়ি, শ্বশুরবাড়ির সব আত্মীয়স্বজনরাও সকলে একই কথাই বলছেন, ‘মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে বিজেপি যে এমন নোংরা রাজনীতি করতে পারে, তা ভাবতে পারছি না’।
মেরুকরণের লক্ষ্যেই গেরুয়া শিবির আগেভাগে জিয়াগঞ্জের ঘটনায় রং লাগিয়ে বিভাজনের তাস খেলছিল বলে অভিযোগ করছিল বিরোধীরা। মূল অভিযুক্তের গ্রেফতারের পর সেই বিতর্ক আরও জোরালো। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় আগেই অভিযোগ করেছিলেন, বিজেপি ‘সাম্প্রদায়িক’ রাজনীতি করে তিলকে তাল করছে। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘খুনের পরে দিলীপ ঘোষেরা দাবি করেছিলেন, নিহত বন্ধুপ্রকাশ আরএসএস কর্মী। পরে নিহতের পরিবার বলল, কখনওই উনি রাজনীতি করেননি। প্রশাসন যখন অভিযুক্তদের গ্রেফতার করল, তখন নিজেদের মুখ ঢাকার আর জায়গা না পেয়ে বিজেপি নেতারা দিল্লিতে গিয়ে কাঁউকাঁউ করছেন! রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়ে সিবিআই তদন্তের জিগির তুলছেন!’’
বন্ধুপ্রকাশের মাসতুতো ভাই রাজেশ ঘোষ বলেছেন, ‘ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। আমার দাদা কোনওদিন কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। কখন মিটিং-মিছিলে যাননি। আরএসএস করার প্রশ্নই নেই। মর্মান্তিকভাবে একই বাড়ির তিনজন খুন হলেন, আর বিজেপি তার ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। বিজেপি নেতাদের বলব, দোহাই, এমন মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করবেন না। আমরা চাই, পুলিশ খুনিদের গ্রেফতার করুক।’ বন্ধুপ্রকাশের শ্যালক সাক্ষিগোপাল মণ্ডলেরও দাবি, ‘আমার জামাইবাবু, দিদি কেউ কোনওদিন রাজনীতি করেনি। বিজেপি নেতারা কেন যে এমন করছেন বুঝতে পারছি না। আমরা এর প্রতিবাদ করছি।’