গত ৫ আগস্ট সংসদে ৩৭০ ধারা বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা খারিজের ঘোষণা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সংখ্যাগরিষ্ঠতার বলে বিল পাশ করিয়ে কাশ্মীর থেকে লাদাখকে বিচ্ছিন্ন করে দু’টি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করার ঘোষণা করেন তিনি। তারপর থেকে কেটে গিয়েছে প্রায় দু’মাস। এখনও গুলমার্গ খাঁখাঁ। সোনমার্গ শূন্য। পহেলগাও ফাঁকা। এক জনও পর্যটক নেই শ্রীনগরের কোনও হোটেলে। শাল-টুপি-উপহারের দরাদরি নেই। ঝাঁপ নামানো প্রায় সব দোকানের। ডাল লেকে প্রায় ৯০০ হাউসবোট। সবই তালাবন্দী। ৩০ বছরের মধ্যে দুর্গাপুজোয় এতটা পর্যটকহীন হয়নি কাশ্মীর।
প্রতি পুজোয় কাশ্মীরের যে কোনও অংশ ঠাসা থাকে বাঙালি পর্যটকে। এ বার ভূস্বর্গ পুরোপুরি বাঙালিহীন। আজ নিয়ে ৫৮ দিন ধরে চলছে এই অবস্থা। এরই মধ্যে জম্মু-কাশ্মীরের ৩১০টি ব্লক উন্নয়ন পরিষদে ২৪ তারিখ ভোট করানোর জন্য আজ বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। কেন্দ্র ও রাজ্য প্রশাসন বলছে, বিধিনিষেধ যেটুকু রয়েছে তা জাতীয় স্বার্থে জরুরি। আর সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য, ব্যক্তির স্বাধীনতা ও জাতীয় স্বার্থের মধ্যে ভারসাম্য থাকা দরকার। তবে বছরের শুরুটা এমন ছিল না। শুধু মার্চ-এপ্রিলেই ১ লক্ষ ৮৩ হাজার ভ্রমণপিপাসুর পা পড়েছিল টিউলিপ গার্ডেনে। রাজ্যে বাড়তি আধাসেনা মোতায়েনের পর থেকেই বুকিং বাতিল হতে থাকে অশান্তির আশঙ্কায়।
৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের ঘোষণার ঠিক আগে, সন্ত্রাসবাদী হামলার আশঙ্কার কথা জানিয়ে অসম্ভব দ্রুততার সঙ্গে রাজ্য থেকে বিদায় করা হয় ২৫ হাজার পুণ্যার্থী ও পর্যটককে। হোটেল মালিক সংগঠনের মাজিদ কাপরার কথায়, ‘কার্গিল যুদ্ধের সময়েও পর্যটক আসা বন্ধ হয়নি জম্মু-কাশ্মীরে। কিন্তু এবার পুজোয় বাংলা বা দেশের কোনও প্রান্ত থেকেই কোনও পর্যটক আসেননি। ৫ আগস্টের পর কেউই আসছেন না।’ উপত্যকায় পর্যটনের ভরসায় রুটি-রুজি চলে ২০ হাজারের বেশি মানুষের। পরোক্ষ ভাবে যুক্ত আরও কয়েক লক্ষ মানুষ। তবে ডাল লেকে বরাবরই ঘুরে বেড়ায় যে শয়ে শয়ে শিকারা, তার মালিক-মাঝিরা এখন লেকের ধারে সার বেঁধে বসে। আনাজ বেচেই পেট চালাতে হচ্ছে তাঁদের।