বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান! মুখ্যমন্ত্রীর সম্প্রীতির বাংলার এ যেন এক নতুন উদাহরণ… রথ বানানোর কারিগর না থাকায় এগিয়ে এসে নিজের কাঁধে দায়িত্ব তুলে নিলেন এক মুসলিম যুবক। রোজ নিয়ম মেনে পাঁচ ওয়াক্ত নমাজ পড়েন তিনি। পাড়ায় একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম হিসেবেই পরিচিতি তাঁর। গত এক মাস ধরে নাগাড়ে পরিশ্রম করে তিনিই বানালেন জগন্নাথ দেবের রথ। এখন শুধুই প্রহর গোনার পালা, কখন তাঁর তৈরি রথে সওয়ার হবেন জগন্নাথদেব !
পাড়ায় কোনও বড় রথ নেই। তাই সিউড়ির কলেজপাড়ার যাত্রিক ক্লাব এ বার বাসিন্দাদের সেই দুঃখ ঘোচানোর উদ্যোগ নেয়। কিন্তু এতবড় রথ বানাবে কে? ক্লাব সদস্যদের মাথায় যখন ঘুরছে সেই ভাবনা, তখন এগিয়ে এলেন পাড়ারই পপুলার ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক মোল্লা ওমর ফারুক। “শুনলাম, এ বার পাড়ার মন্দির থেকে জগন্নাথের রথ বের হবে। কিন্তু ভালো মিস্ত্রি পাচ্ছিলো না ওরা। আমারতো এ কাজটা জানা। তাই আমিই এগিয়ে গেলাম। যদি ওরা রাজি হয়।” শুধু রাজি হননি, বিস্ময়ের ঘোর কাটতে একরকম উচ্ছ্বাসে ভেসে গিয়েছিলেন যাত্রিক ক্লাবের সদস্যরা।
রথ তৈরি শুরু করলেন মোল্লা ওমর ফারুক। সঙ্গে নিলেন কলেজপাড়ারই বাসিন্দা দক্ষ মেকানিক অপু মালাকারকে। গত এক মাস ধরে দিন রাত কাজ করে বুধবারই শেষ করেছেন রথ তৈরির কাজ। শেষ সাজসজ্জাও। ক্লাবের সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় ভৌমিক জানান, দুজনকেই পারিশ্রমিক দিতে চেয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু দুজনেই জানিয়েছেন আগে জগন্নাথ রথে উঠুন। তাঁকে দেখে আনন্দে এলাকায় সবাই যখন মেতে উঠবে, ওটাই হবে তাঁদের পারিশ্রমিক।
মৃত্যুঞ্জয়বাবু বলেন, “এ বার আমাদের প্রথম রথযাত্রা। আর প্রথমবারই সব ধর্ম এসে মিশে গেল এখানে। এর আনন্দ আমরা বলে বোঝাতে পারবো না।” আর মোল্লা ওমর ফারুক বললেন, “মানুষের প্রতি ভালোবাসা, দায়বদ্ধতা থেকে আমি অনুপ্রেরণা পাই। ধর্মের মূল উদ্দেশ্যই তো হল আত্মার মুক্তি। উৎসব এমন একটা জিনিস, যা বিভিন্ন জাতি, ধর্মের মানুষকে এক জায়গায় দাঁড় করায়। বিভিন্নতার মধ্যে ঐক্য তৈরি করে। আমার তৈরি রথকে কেন্দ্র করে সবাই আনন্দে মেতে উঠবে, এটাই তো সব চেয়ে বড় পাওনা।”