নিউজিল্যান্ডকে চলতি বিশ্বকাপে প্রথমবার হারের মুখ দেখিয়ে সেমিফাইনালের পথে পা বাড়ালো পাকিস্তান৷ এজবাস্টনে কিউয়িদের ৬ উইকেটে পরাজিত করল ১৯৯২-এর বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নরা৷ ১৯৯২ সালেও ছবিটাও ঠিক একই রকম ছিল। টুর্নামেন্টের প্রথম থেকে অপরাজিত কিউয়িদের প্রথম হারিয়েছিল ইমরান খানের পাকিস্তান। এ বারেও তাই হলো। পাকিস্তানের কাছেই প্রথমবার হারতে হলো নিউজিল্যান্ডকে। কিউয়িদের হারিয়ে শেষ চারের সম্ভাবনা বাড়ালেন সরফরাজরা।

এজবাস্টনে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করে নিউজিল্যান্ড নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৩৭ রান তোলে৷ কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমকে সঙ্গে নিয়ে কিউয়িদের লড়াইয়ের রদস এনে দেন জিমি নিশাম৷ টিনএজার শাহীন শাহ আফ্রিদি একার হাতে কিউয়ি ব্যাটিং লাইনআপে ধস নামান৷ পালটা ব্যাট করতে নেমে ৪৯.১ ওভারে ৪ উইকেটের বিনিময়ে ২৪১ রান তুলে ম্যাচ জিতে যায় পাকিস্তান৷ দুরন্ত শতরান করেন বাবর আজম৷ তাঁকে যোগ্য সঙ্গত করেন গত ম্যাচের নায়ক হ্যারিস সোহেল৷

নিউজিল্যান্ড ইনিংসের শুরুটা হয় দুঃস্বপ্নের মতো৷ ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে বল করতে এসে মহম্মদ আমের প্রথম বলেই তুলে নেন মার্টিন গাপ্তিলের উইকেট৷ ৪ বলে ৫ রান করে প্লেড-অন হন গাপ্তিল৷ কলিন মুনরো ও রস টেলরকে এক ওভারের ব্যবধানে ফিরিয়ে দেন শাহীন৷ মুনরো ১৭ বলে ১২ রান করে হ্যারিস সোহেলের হাতে ধরা পড়েন৷ টেলর ৮ বলে ৩ রান করে সরফরাজের দস্তানাবন্দি হন৷
টম লাথাম ১৪ বলে ১ রান করে শাহীনের তৃতীয় শিকার হন৷ উইকেটের পিছেন তাঁর ক্যাচটিও দস্তানাবন্দি করেন সরফরাজ৷ কেন উইলিয়ামসন ৬৯ বলে ৪১ রান করে শাদব খানকে উইকেট দেন৷ গ্র্যান্ডহোমকে সঙ্গে নিয়ে নিশাম ষষ্ঠ উইকেটের জুটিতে ১৩২ রান যোগ করেন৷ বিশ্বকাপে ষষ্ঠ উইকেটে এটি নিউজিল্যান্ডের রেকর্ড পার্টনারশিপ৷

শেষে ৬টি চার ও ১টি ছক্কার সাহায্যে ৭১ বলে ৬৪ রান করে দূর্ভাগ্যজনক রানআউট হন গ্র্যান্ডহোম৷ মিচেল স্যান্টনারকে সঙ্গে নিয়ে জিমি নিশাম ইনিংসের শেষ পর্যন্ত ক্রিজে অতিবাহিত করেন৷ স্যান্টনার ৫ বলে ৫ রান করে অপরাজিত থাকেন৷ নিশামকে থেমে যেতে হয় ব্যক্তিগত শতরান থেকে ৩ রান দূরে৷ ১১২ বলে ৯৭ রান করার পথে ৫টি চার ও ৩টি ছক্কা মারেন নিশাম৷ পাকিস্তানের হয়ে শাহিন আফ্রিদি ২৮ রানে ৩টি উইকেট নেন৷ মহম্মদ আমের ও শাদব খান নিয়েছেন ১টি করে উইকেট৷ ১০ ওভার হাত ঘুরিয়েও কোনও উইকেট পাননি ওয়াহাব রিয়াজ৷
জবাবে ব্যাট করতে নামা পাকিস্তানও মাত্র ৪৪ রানের মধ্যে দুই ওপেনার ফকর জামান ও ইমাম উল হকের উইকেট খুইয়ে বসে৷ফকর ৯ রান করে বোল্টের বলে গাপ্তিলের হাতে ধরা পড়েন৷ ইমাম ১৯ রান করে ফার্গুসনের বলে গাপ্তিলকে ক্যাচ দিয়ে বসেন৷ পরে মহম্মদ হাফিজ ও হ্যারিস সোহেলকে সঙ্গে নিয়ে বাবর আজম দলকে জয়ের লক্ষ্যে টেনে নিয়ে যান৷ হাফিজের সঙ্গে ৬৬ ও সোহেলের সঙ্গে ১২৬ রানের পার্টনারশিপ গড়েন বাবর৷ হাফিজ ৩২ রান করে উইলিয়ামসনের বলে আউট হন৷ সোহেল ৬৮ রান করে রানআউট হয়ে ক্রিজ ছাড়েন৷ সরফরাজ ৩ বলে ৫ রান করে নটআউট থাকেন৷ বিশ্বকাপে নিজের প্রথম তথা ওয়ান ডে কেরিয়ারের ১০ নম্বর সেঞ্চুরি করে অপরাজিত থাকেন বাবর৷ ১২৭ বলে অপরাজিত ১০১ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংসের সুবাদে ম্যাচের সেরা হন বাবর৷

এ দিন পাকিস্তানের হাতে বিশ্বকাপে প্ৰথম হার হলো উইলিয়ামসনদের। সেইসঙ্গে বিশ্বকাপের মঞ্চেও দারুণভাবে ফিরে এল পাকিস্তান। তাঁদের পরের দুটো ম্যাচ আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের সঙ্গে। সেই দুটো ম্যাচ জিতলে শেষ চারে পৌঁছে যেতে পারেন সরফরাজরা। একইসঙ্গে আজকের ম্যাচ পাকিস্তান জিতে যাওয়ায় চাপ বাড়ল ইংল্যান্ডের উপর।