এই মুহূর্তে দেশ জুড়ে চলছে লোকসভা নির্বাচন। কিন্তু এরই মধ্যে সর্বোচ্চ আদালত জানিয়ে দিল, আগামী ১৫ জুন অতিরিক্ত তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর ৩১ জুলাই প্রকাশিত হবে আসামে এনআরসির (নাগরিকপঞ্জি) চূড়ান্ত তালিকা। বুধবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ ও বিচারপতি আরএফ নরিম্যানের বেঞ্চ পূর্ণ ক্ষমতা দিয়েছে আসামে এনআরসির সমন্বয়ক প্রতীক হাজেলাকে। এবং জানিয়ে দেওয়া হয়েছে পরবর্তী শুনানি হবে ১০ জুলাই।
প্রসঙ্গত, গতকালও এনআরসি কেন্দ্রগুলিতে অভিযোগের নামে আসামের ভাষিক সংখ্যালঘুদের হয়রানির অভিযোগ তোলা হলেও, আদালত তাতে তেমন কর্ণপাত করেনি। কিন্তু এ নিয়ে আসাম জুড়ে নতুন করে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে বাঙালিরা মহা সমস্যায় পড়েছেন। একটি ঘটনার উদাহরণ দিলেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
যেমন বক্সা জেলার এক মহিলাকে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের শুনানির জন্য সকাল ৯টায় ডাকা হয় বাড়ি থেকে ৪৫ কিমি দূরে গুরেশ্বর এনআরসি সেবাকেন্দ্রে। আবার সকাল ১১টাতেই তাঁকে উল্টোদিকে ৫৫ কিমি দূরের মুসলপুর কেন্দ্রে হাজিরা দিতে বলা হয়। অভিযোগ উঠেছে, এই ভাবেই ব্যক্তিগত শত্রুতা আর বাঙালি বিদ্বেষকে কাজে লাগানো হচ্ছে। অথচ, অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হলে অভিযোগকারীর কোনও শাস্তি নেই। এমনকী, অভিযোগকারীরা অধিকাংশ সময়ই নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এনআরসি কেন্দ্রে গরহাজির থাকছেন।
ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অফ বেঙ্গলিজ (এনএলএফবি)–এর মুখপাত্র অমরজিৎ পালের অভিযোগ, তথ্য যাচাইয়ের নামে চলছে অমানবিক অত্যাচার। প্রশাসন কিছুই বলছে না। তাঁর অভিযোগ সরাসরি সারা আসাম ছাত্র সংস্থার (আসু) দিকে। আসাম রাজ্য জমিয়ত উলেমার সাধারণ সম্পাদক ফসদুল করিম বলেন, মুসলিমদের হয়রানি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। কোকরাঝাড় লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ, বড়ো নেতা নবকুমার সরণিয়ার অভিযোগ, বড়োল্যান্ড টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল (বিটিসি) খোদ সংখ্যালঘুদের তথ্যপ্রদানের নামে হয়রানি করছে।
তবে শুধু সাধারণ মানুষই নন, হয়রানির শিকার অসমের প্রাক্তন বিধায়ক মৌলবি শেখ ওসমান আলির পরিবারও। তাঁর পরিবারকে বিভিন্ন জায়গায় নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হচ্ছে। উল্লেখ্য, আসামে গত বছর ৩০ জুলাই প্রকাশিত এনআরসি তালিকায় ৩ কোটি ২৯ লাখ আবেদনকারীর মধ্যে ৪০ লাখ ৭০ হাজার ৭০৭ জনের নাম বাদ যায়। পরে তালিকাভুক্ত নাগরিকদের বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ আনা হয়। নতুন করে আবেদন জমা দিতে গিয়েও পড়তে হচ্ছে হাজারো ঝামেলায়।
ফলে ১৫ জুন অতিরিক্ত তালিকা প্রকাশিত হলেই বোঝা যাবে সংখ্যালঘুরা নাগরিকত্ব নিয়ে কী ধরনের সমস্যায় রয়েছেন। সংখ্যালঘু বিভিন্ন সংগঠনের দাবিদাওয়াকে গুরুত্ব না দিয়ে ৩১ জুলাই প্রকাশিত হতে চলেছে চূড়ান্ত তালিকা। এই অবস্থায় আসাম রাজ্য নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমন্বয় সমিতি (সিআরপিসিসি)-র সভাপতি তপোধীর ভট্টাচার্য মন্তব্য করেন, কেন্দ্র ও রাজ্যের দানবিক সরকারের কাছ থেকে এর বেশি কিছু আশা করা যায় না। তিনি অসমিয়া আধিপত্যবাদের পাশাপাশি বিজেপির ‘হিন্দু, হিন্দি আর হিন্দুস্থান’ লাইনকেও দায়ী করেন।
তপোধীরবাবু বলেন, ভোটের কাজ শেষ হতেই অসমিয়া আধিপত্যবাদীদের হাত ধরে বাঙালিকে নির্মূল করার কাজে হাত মিলিয়েছে হিন্দুত্ববাদীরা। শুধু আসামেই নয়, বাংলাতেও বাঙালিদের সর্বনাশ করতে চাইছে বিজেপি। উদাহরণ হিসেবে তিনি বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষের উত্তরপ্রদেশ থেকে লোক এনে মারধর করার হুমকির কথা উল্লেখ করেন। তাঁর সাফ কথা, যাঁরা বিজেপি করেন তাঁরা কেউ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম, জীবনান্দ দাশ বা বিদ্যাসাগর, রামমোহনের উত্তরসূরি হতে পারেন না। কারণ বিজেপির কাজই হচ্ছে বাঙালিদের নির্মূল করা।