এবার বাংলায় গেরুয়া শিবিরের হয়ে ব্যাট ধরলেন প্রকাশ কারাত। সিপিএমের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাতের মন্তব্য, ‘বাংলায় বিজেপির শক্তিবৃদ্ধি হতে চলেছে বলেই মনে হচ্ছে’। তাঁর এমন মন্তব্যে বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ সিপিএমেরই বড় অংশই। তাঁদের মতে, এর ফলে বাংলায় বামেদের ভোট রামেদের দিকে চলে যাওয়ার প্রবণতা আরও তীব্র হবে।
পঞ্চেয়েতে বাম-রাম জোট হয়েছিল। তার ফল এখন ভুগতে হচ্ছে বামেদের। বাংলায় এখনও ২ পর্যায়ের ভোট বাকি। এরকম অবস্থায় কারাতের এমন মন্তব্যে সিপিএমের সমস্যা আরও বাড়ল। স্বাভাবিক ভাবেই বাংলার সিপিএম নেতারা ব্যাপক চটেছেন। তাঁদের কথায়, কারাত সবসময় কেরালার স্বার্থ দেখেন। এবার তাই দেখতে গিয়ে বাংলায় সিপিএমের আরও সর্বনাশ করে দিলেন।
কেরলে ভোট হয়ে যাওয়ার পরে সে রাজ্যের মালয়ালম সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য প্রকাশ কারাত বলেন, ‘বিজেপির বিরুদ্ধে বিভিন্ন শক্তিকে একজোট করতে কংগ্রেসের যে ভূমিকা নেওয়া উচিত ছিল, তা তারা নেয়নি। ভোট যেমন হচ্ছে, তাতে কংগ্রেসের তিন অঙ্ক পেরোবে বলে মনে হয় না। তবে অ-বিজেপি সরকারই কেন্দ্রে আসতে চলেছে।’ সেই অ-বিজেপি সরকারে কার কেমন ভূমিকা হবে, সেই প্রশ্নে কারাটের জবাব, ‘কে কত আসন পাচ্ছে, তার উপরে এ সব নির্ভর করছে।’ বাংলায় তৃণমূলের পাশাপাশি বিজেপির উত্থান ঠেকাতে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা চেয়েছিল আলিমুদ্দিন। তাতে সায় ছিল দলের কেন্দ্রীয় কমিটিরও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই সমঝোতা হয়নি। কারাটের মতে, ‘বাংলায় তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ রয়েছে। বিজেপির শক্তি সেখানে বাড়বে বলেই মনে হয়’।
কারাতের এই মন্তব্য প্রকাশে আসতেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এর আগে রাজস্থানের নির্বাচনের সময় কেরালার কান্নুরের প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ এ পি আবদুল্লা কুট্টি অভিযোগ করেছিলেন, বিজেপিকে রাজস্থানে সুবিধা করে দিতেই কারাতরা ১০০ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন। কারণ রাজস্থানে পর্যাপ্ত শক্তি না থাকা স্বত্বেও ৩০ টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল সিপিএম। জয়ী হয়েছিল ২ টি আসনে। ফলাফল প্রকাশ হলে দেখা যায়, সিপিএম প্রার্থীরা বেশীরভাগ আসনে যা ভোট পেয়েছে বিজেপির জয়ের মার্জিন তারচেয়ে কম। অর্থাৎ সিপিএম ওখানে প্রার্থী না দিলে বিজেপি জিততে পারত না। এরপরই প্রশ্ন উঠে যায়, ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে হারাতে কারাতরা কি সত্যিই টাকা নিয়েছিলেন?
রাজস্থানে শক্তি না থাকা স্বত্বেও প্রার্থী দেওয়ার এই ‘বুদ্ধি’ বেরিয়েছিল হান্নান মোল্লার উর্বর মস্তিষ্ক থেকে। সেই হান্নান মোল্লা যিনি হাওড়ার দাপুটে সিপিএম মন্ত্রী নিরুপমা চ্যাটার্জির পিএ ছিলেন। এরপর ৮০ সালে তালেগোলে হরিবোলে উলুবেড়িয়ে থেকে টিকিট বাগিয়ে নেন হান্নান। তারপর ১০৮০ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত টানা ২৯ বছর উলুবেড়িয়ার সংসদ ছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর জনপ্রিয়তা এমনই যে রাস্তা দিয়ে হাঁটলে হাওড়ার ৫ জন লোকও তাঁকে চিনতে পারে না। এহেন হান্নানই রাজস্থানে সিপিএমের দায়িত্বে।
ঘটনাচক্রে বিজেপির তাবড় নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে হান্নানের ঘনিষ্ঠতা আছে। রাজীবপ্রতাপ রুডির মতো বিজেপি নেতা প্রকাশ্যেই হান্নানকে ‘গুরু’ বলে সম্বোধন করেন। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছিল, হান্নানের বেশি সিটে প্রার্থী দেওয়ার ফর্মুলা কি বিজেপিকে সুবিধা করে দিতেই?
প্রকাশ কারাতের ‘বাংলায় বিজেপির শক্তিবৃদ্ধির’ মন্তব্য স্বাভাবিকভাবেই আলিমুদ্দিনের নেতাদের বিপাকে ফেলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘প্রকাশ কারাত তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমাতেই আবার বাংলার সিপিএমকে ল্যাজেগোবরে করে দিলেন’।