‘এক কাপ চা’ দিয়েই বাংলা গানের জগতে আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল তাঁর। তিনিই ‘হাল ছেড়ো না বন্ধু’ গেয়ে জীবনবিমুখ মানুষকে করে তুলেছিলেন জীবনমুখী। তবে তিনি শুধু গানের জগতেরই লোক নয়। একসময় তিনি ছিলেন যাদবপুরের তৃণমূল সাংসদ। এখন নন। কিন্তু এখনও তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি তাঁর অগাধ ভরসার কথা হামেশাই ফেসবুকে তুলে ধরেন কবীর সুমন। সেইসঙ্গে তুলোধনা করেন বিজেপিকে। এবার সেই সূত্রেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর সঙ্গে কার্যত যুদ্ধে নামলেন আসানসোলের বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়। হোয়াটসঅ্যাপে তাঁর সঙ্গে বাবুলের কথোপকথনের কিছু অংশ ফেসবুকে তুলে ধরেছেন কবীর সুমন। আর তাতেই বোঝা যাচ্ছে, দুজনের মধ্যে তৈরি হয়েছে তীব্র সংঘাত।
বুধবার সকালে কবীর সুমন ফেসবুকে একটি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘আমার একটি গান শুনে শ্রী বাবুল সুপ্রিয়, মাননীয় বিজেপি সাংসদ ও গায়ক, আমায় একের পর এক হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ করতে থাকেন। আমিও জবাব দিতে থাকি। সকলের জানা দরকার। তিনি বলেছেন তিনি শিল্পী। তাই আমি তাঁকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছি মঞ্চে আমার সঙ্গে রাজনৈতিক গানের ডুয়েলে নামতে। তিনি চান বিতর্ক। বিতর্ক হলেই শুধু কথার ঢেউ ওঠে, তুবড়ি ছোটে, মেজাজ চড়ে যায়। বরং গান হোক। তিনি আমার সৃজনশীলতা ও কবিত্বশক্তি নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। তাহলে তিনি আসুন মঞ্চে, তাঁর ক্ষমতা দেখান।’
সেইসঙ্গে বাবুলের হোয়াটসঅ্যাপের একটি অংশও ওই পোস্টের সঙ্গে জুড়ে দেন তিনি। যেখানে বাবুল লিখেছেন, “কবি(র) সুমনদাদা…যে হিন্দু ভাইয়েরা দিনের পর দিন অত্যাচারিত হচ্ছে আমাদের বাংলায়, আপনার মমতাময়ী মুখ্যমন্ত্রীর ‘অনুপ্রেরণায়’, তাদের নিয়ে কখনও কোনো কবিতা লিখতে ইচ্ছে করে না? না কি ‘হটাৎ’ ধর্মান্তরিত হয়ে ‘কবির’ কবি তার সু-মন টি হারিয়ে ফেলেছে!! খুব জানতে ইচ্ছে করে – তুমি কি সেই আগে মতোই আছো …. ? ‘প্রনাম’ নেবেন।” ব্যস, এরপরই এগোতে থাকে তর্কযুদ্ধ। রাজনীতির বাইরে যে সূত্রে দুজন বাঁধা, সেই সঙ্গীত নিয়েই বাবুল সুপ্রিয়কে খোলা চ্যালেঞ্জ জানান সুমন।
তিনি বলেন, ‘বিজেপির মানুষ বাবুল সুপ্রিয় আমার সঙ্গে এক মঞ্চে এসে রাজনৈতিক গান করুন। আমি বিজেপি আর এস এস হিন্দুত্বর বিরুদ্ধে গাইব, বাজাব। উনি আমার বা মমতার বিরুদ্ধে গান। ইচ্ছে করলে সারা ভারত থেকে সহশিল্পী আনতে পারেন। আমি একা থাকব।’ তবে বাবুল যে তা এড়িয়ে গেলে তিনি বলেন, ‘আমি ধার্মিক লোক নই। বিজেপির মত হিন্দুধর্মসর্বস্ব পার্টির কোনো সদস্য ও সাংসদ যখন আমাকে আমার ধর্ম নিয়ে কথা বলে, ভারি মধুর লাগে। হ্যাঁ, বিজেপির বিপরীতে আমি এই রাজ্যে মমতাপন্থী। যে কেউ, দুনিয়ার যে কেউ আসুন আমার বিরুদ্ধে গান বাঁধুন, গান একই মঞ্চে। আমিও গাইব। কিন্তু মান্যবর বাবুল সুপ্রিয় রাজি হলেন না।’
শেষে বাবুলকে বিজেপি নিয়েই আক্রমণ করে সুমন লেখেন, ‘তাঁর মঙ্গল হোক। তিনি জীবনে সুখী ও সফল হোন। আর কবীর সুমন কতটা কবি, মমতার কারণে কবীর সুমনের সঙ্গীতের কতটা ক্ষতি হয়েছে এসব বলার ইচ্ছে মান্যবরের হলেই তিনি যেন স্মরণে আনেন – তিনি বলেন তিনি সংগীতশিল্পী কিন্তু সংগীতের চ্যালেঞ্জটা তিনি নিতে পারলেন না। জয় সেকুলার ভারত। নিপাত যাক বিজেপি।’ এখানেই শেষ নয়, তাঁর পরের ফেসবুক পোস্টের সঙ্গেও হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথন জুড়ে দেন সুমন। সেখানে দেখা যায় সুমন লিখেছেন, ‘যাঃ! কী চমৎকার হচ্ছিল। আসুন, এমনিই গান গাই দুজনে।’ গতকাল সুমন এ কথাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ‘আমি বিজেপির বিরুদ্ধে। হ্যাঁ, এই ভোটে আমি শ্রীমতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে।’