প্রিয়াঙ্কা গান্ধী দাঁড়ালে চিহ্নটা হাতই থাকত, কিন্তু ওই হাত দেখে গোটা অপোজিশন এক হয়ে যেত দাদা! সবাই চাইছিল এমন একটা মুখ, যাকে মোদীজির পাল্টা হিসাবে তুলে ধরা যায়। আর, কে জানে বেরিয়েও যেতেন হয়তো। বললেন, মদনপুরার প্রান্তে অবস্থিত আশফাক নগরের মেহফুজ আলম। নিজের কথার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘গতবারের দেশজোড়া মোদী হাওয়ার কথা ভাবুন! সে লহর এ বার কোথায়? সে বারেও কেজরিওয়াল ভোট পেলেন দু’লাখের বেশি, কংগ্রেস আর বিএসপি মিলিয়ে আরও প্রায় লাখ দেড়েক। তার মানে প্রিয়াঙ্কা তো সাড়ে তিন লাখ ভোট নিয়ে শুরুই করতেন।
কিন্তু কথা হল, আগেরবার মোদী পেয়েছিলেন পাঁচ লাখ আশি। এত বড় একটা ফারাক ভরানোর হিম্মত রাখে কংগ্রেস? বিশেষত, গোটা বারাণসী চক্কর কেটেও যখন হাত চিহ্নের নামগন্ধ দেখা যায়নি! না পোস্টার, না ব্যানার, না ফেস্টুন। কী করে জোগাড় হত বাড়তি ভোট? মেহফুজ আলমের জবাবটি সংক্ষিপ্ত, এবং তা আগের চেয়েও বেশি হেঁয়ালি-মাখানো। তাঁর কথায়, অনুপ্রিয়া প্যাটেল মানে এখন যিনি কেন্দ্রে প্রতিমন্ত্রী, আর তাঁর বাবা সোনেলাল প্যাটেল। ‘আপনা দল’ তো তৈরিই করেছিলেন উনিই। কিন্তু তার সঙ্গে এই ভোটের, বা প্রিয়াঙ্কার কী লেনাদেনা?
মেহফুজের ব্যাখ্যা, সোনে লালকে যারা দু’চক্ষে দেখতে পারত না, তারাও অনুপ্রিয়াকে দেখে ভাবল, নাহ, বাবা যেমনই হোক, মেয়েটা তো ভাল, শিক্ষিত, দেখতে-শুনতে ঠিকঠাক, ফলে ভোটটা অনুপ্রিয়াকেই দিল। না হলে কখনও জেতে? একই জিনিস প্রিয়াঙ্কার ক্ষেত্রেও হত। অমন আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব, কথা বলেন ভালো, সুদর্শনা, ভোটারদের শোচসমঝ পাল্টে যেত দাদা। কংগ্রেস তো বটেই, তামাম অপোজিশন, এমনকি বিজেপির কিছু ভোটদাতাও যে শেষমেশ হাতেই ছাপ দিতেন না, তাই বা কে জানে!
মেহফুজ যেখানে দাঁড়িয়ে কথাটা বলছেন, সেটা সংখ্যালঘু মহল্লা, আশফাক নগর। মেহফুজের পর তাঁর ভাই মেহমুদ নিয়াজি অভিযোগের সুরে বলেন, মোদীজির ‘আচ্ছে দিন’-এর কিছুই তো বেচারা মুসলিমরা দেখতে পেল না। আমাদের যদি কিছু পেতে হয়, কওমকে ছেড়ে দিয়ে করতে হবে। সে আমরা করব না। প্রয়োজনে আধখানা রুটি খাব, কিন্তু কওম ছাড়ব না। আর এজন্যই মোদীর বিকল্প হিসেবে তাঁরা বেছে নেবেন ভেবেছিলেন প্রিয়াঙ্কাকেই। তবে শুধু আশফাক নগর নয়, বারাণসীর প্রতিটি প্রান্তে ঘুরলেই দেখা যাচ্ছে, মেহফুজ আলমদের শোক কমবেশি গোটা নগরীকেই গ্রাস করেছে।
কেদার ঘাটের তুলসিদাসী রামায়ণ পাঠ থেকে বারাণসী পানের খুপরি দোকান, দশাশ্বমেধ থেকে মণিকর্ণিকার শ্মশান হয়ে আরও উত্তরে চলে যাচ্ছে যে সব নৌকা, গোধুলিয়া চকে দিনভর পাক খাচ্ছে যে সব অটো-টোটোর দল, সর্বত্র আলোচনার কেন্দ্রে একটি শূন্যস্থান। সবখানেই প্রিয়াঙ্কার জন্য আরও হাহুতাশ! এত দিন পরে যদি বা একটা পাল্টা দেওয়ার মতো উম্মিদবার পাওয়া গেল, গোটা লড়াইটাই কেঁচে গেল শেষ মুহূর্তে! একটা আলো যেন জ্বলতে গিয়েও আর জ্বলল না।