দেশের যে কজন মুখ্য নির্বাচনী কমিশনার (সিইসি) দু’টি করে লোকসভা নির্বাচন পরিচালনা করেছেন তাঁদের অন্যতম ছিলেন প্রয়াত কল্যাণ সুন্দরম। এছাড়া মুখ্য নির্বাচনী কমিশনার পদে দীর্ঘতম মেয়াদও তাঁর। ১৯৫৮ সাল থেকে ১৯৬৭ পর্যন্ত ওই পদে আসীন ছিলেন তিনি। তবে তাঁর আর একটি পরিচয়ও আছে। আইনশাস্ত্রে দিকপাল, ১৯৬৮ সালের পদ্মবিভূষণ পাওয়া এই আইসিএস বিখ্যাত চিত্রশিল্পী অমৃতা শের-গিলের ভগ্নীপতি এবং একালের প্রবাদপ্রতিম চিত্রশিল্পী ভিভান সুন্দরমের বাবা।
সেই ডিভানই এবার উজাড় করে দিলেন নির্বাচনী স্মৃতির ঝাঁপি। বাবার সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার বাবা তিন জন প্রধানমন্ত্রী, জওহরলাল নেহরু, লালবাহাদুর শাস্ত্রী এবং ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে কাজ করলেও, অফিসের ফাইলপত্র সাধারণত বাড়িতে আনতেন না। রাজনীতিবিদদের আনাগোনাও আমাদের বাড়িতে ছিল না। রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা সব সময় মেনে চললেও ক্ষমতার অলিন্দে যোগাযোগের কথা বলে বেড়ানোর বিরোধী ছিলেন বাবা।’
তাহলে কেমন কেটেছিল ভিভানের শৈশব ও কৈশোর? তাঁর কথায়, ‘আমরা থাকতাম ৫, রেস কোর্স রোডে। এই বাড়ি সনিয়া গান্ধী ও পরে নরেন্দ্র মোদীর বাসস্থান হিসাবে এখন পরিচিতি লাভ করেছে। আমাদের সময়, বাবার বন্ধু কয়েক জন সরকারি আমলা বাড়িতে এলেও বাড়ির সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলই আমায় টানত বেশি। মা ইন্দিরা ছিলেন অমৃতা শের-গিলের ছোট বোন। সেই কারণে বাড়িতে পাশ্চাত্য প্রভাব ভালোই ছিল। বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদল আমাদের বাড়ি ঘুরে যেতেন। বাড়িতে পিয়ানো বাজানোর চল ছিল। জিমখানা ক্লাবে টেনিসও খেলতে যেতাম।’
সব থেকে আশ্চর্যের বিষয় হল, বাবা সিইসি থাকাকালীন ভিভানের ভোট দেওয়ার সুযোগ হয়নি। আসলে সে সময় একুশ বছর বয়স না-হলে ভোট দেওয়া যেত না। আর যখন তাঁর একুশ জল, তখন তিনি ভদোদরার এমএস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দৃশ্যকলায় স্নাতক হয়ে লন্ডনের স্লেড স্কুল অফ আর্টে পাঠরত। ভিভান বললেন, ‘১৯৭০-এ দেশে ফিরে পরের বছরের সাধারণ নির্বাচনে প্রথম ভোট দিই। সেই সময় কংগ্রেসই ছিল সব থেকে বড় দল। স্বাভাবিক ভাবে তাদের পরিচিতিও ছিল সব থেকে বেশি।’
সেদিন থেকে আজ, ভোটের প্রক্রিয়া থেকে আবহ, অনেক কিছুই বদলে গিয়েছে। সেই প্রসঙ্গে আক্ষেপের সঙ্গে ভিভান বললেন, ‘দেখুন ভোটে হিংসা, বুথ দখলের মতো ঘটনা আগেও ঘটেছে। কিন্তু গত দশ বছরে, বিগ বিজনেসের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলির ঘনিষ্ঠতা ভাবার বিষয়। ভোট এখন যুদ্ধ। সেখানে অর্থ ও পেশিশক্তির আস্ফালন আমাকে ভীতসন্ত্রস্ত করে। কারণ আমি চিরকাল বৃহত্তর গণতান্ত্রিক আদর্শই মেনে এসেছি।’ ভারতে ইনস্টলেশন আর্টের পথিকৃৎ-এর সাফ কথা, ‘মোদী সরকার ক্ষমতায় ফিরলে শিল্পকলার সঙ্গে যুক্ত ঐতিহ্যশালী প্রতিষ্ঠানগুলি ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।’
জানা গেছে, তাঁর দীর্ঘ জীবনকালে ভিভানের বাবা কল্যাণ সুন্দরম কোনও আত্মকথা লিখে যাননি। কিন্তু ভারত স্বাধীন হওয়ার পর রাজ্যগুলির পুনর্বিন্যাস নিয়ে তাঁর লেখা শ্বেতপত্র (হোয়াইট পেপার) পড়ে এই ‘ব্রাইট ইয়ং লইয়ার’এর (উজ্জ্বল তরুণ আইনজীবী) উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন স্বাধীন ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল লর্ড মাউন্টব্যাটেন এবং প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই পটেল। উল্লেখ্য, সিইসির মেয়াদ শেষ হলে কল্যাণ সুন্দরম ল’কমিশনেরও চেয়ারম্যান হন।