‘কলকাতায় তো আমি মাঝেমধ্যেই যাই। বাঙালিরা আমাকে খুব ভালবাসে। আর মমতাদিদি আমাকে ভীষণ পছন্দ করেন।’ বললেন দুধসাদা স্করপিওর সামনের আসনে চেক শার্ট-কালো প্যান্ট, চোখে বাদামি সানগ্লাসে বসে থাকা শত্রুঘ্ন সিনহা। অনুষ্ঠান সেরে গাড়িতে বসে পড়েছিলেন পাটনা সাহিবের কংগ্রেস প্রার্থী শত্রুঘ্ন। বললেন, ‘মমতাদির যা জনসমর্থন আছে, তাতে অন্য কোনও দল আপনার রাজ্যে লড়াইয়ে টিকবে না। আমার কথা মিলিয়ে নেবেন।’ শুধু তাই নয়, বাংলার বাঘিনীর তারিফ করে তিনি এ কথাও স্বীকার করে নেন, ‘আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একজন বড় ভক্ত। সমর্থক তো বটেই। বন্ধু বলতে পারেন। ওঁকে সম্মান করি। ওঁর লড়াইয়ের, কাজের কদর করি। উনিও আমার কথা খুব মানেন। এটা আমার সৌভাগ্য।’
বাংলা থেকে কেন দাঁড়ালেন না তার ব্যখ্যা দিতে গিয়ে বিহারিবাবু বলেন, ‘মমতাদি একজন গ্রেট লেডি, আমার গ্রেট ফ্রেন্ড। সতি্যই উনি চেয়েছিলেন আমি ওয়েস্ট বেঙ্গলের কোনও সিট থেকে প্রার্থী হই। কিন্তু আমি পাটনার কাছে বচনবদ্ধ রয়েছি, সিচুয়েশন যা-ই হোক লোকেশন এটাই হবে। তাই আমার কথা রক্ষা করার জন্য আমি পাটনার মানুষ ও বিহার পরিবারের কাছে চলে এসেছি।’ মমতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ শত্রুঘ্ন বলেন, ‘আমি দেখছি পুরো বেঙ্গল একজোট হয়ে মমতাকে সমর্থন করছে। সবাই তাঁরই সাপোর্টার। সঠিক অর্থে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একজন আয়রন লেডি, সবথেকে জনপ্রিয় লেডি। তিনি ভীষণ ভাল কাজ করছেন। আমি তাঁর সাফল্যের জন্য শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।’
বিরোধীরা জিতলে মমতাও যে প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন, সে কথাও জানিয়ে দিয়েছিন বিহারিবাবু। তাঁর কথায়, ‘প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্য অনেক নেতা-নেত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও যোগ্য। মায়াবতী-অখিলেশও। রাহুল গান্ধীর নামও থাকছে। মমতাদি তো বারবার বিরোধী জোটের কথা বলেছেন। বিরোধীরা জিতুক। মমতার ঝান্ডা উড়বে। মায়াবতী-অখিলেশের ঝান্ডা উড়বে। রাহুল গান্ধীর ঝান্ডা উড়বে। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যখন জয়জয়কার হবে, তখন একসঙ্গে বসে মিলেমিশে ঠিক রাস্তাও বেরিয়ে আসবে। তবে সবই মানুষ ঠিক করবেন। মানুষের ভোটে নির্বাচিত সাংসদরা ঠিক করবেন, কে হবেন দেশের প্রধানমন্ত্রী।’
প্রসঙ্গত, অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলে বিজেপিতে ছিলেন শত্রুঘ্ন। লালকৃষ্ণ আডবানীর সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক গভীর। তবে সেই তিনিই বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করে চলে এলেন কংগ্রেসে। কী এমন হল? শত্রুঘ্ন বলছেন, ‘কুছ তো মজবুরিয়া রহি, ভরনা ইঁউহি কোই বেবাফা নেহি হোতা। এটা তো এখন সবাই জেনে গিয়েছে শুধুমাত্র আমার সঙ্গে নয়, লালকৃষ্ণ আডবানীজি, বাজপেয়ীজি, মুরলী মনোহর যোশী, অরুণ শৌরি, যশোবন্তজিদের সঙ্গে ঠিক কী হয়েছে? এখন তো ওয়ান ম্যান শো, টু ম্যান আর্মি। অটলজির যাওয়ার পর লোকশাহি তানাশাহিতে বদলে গিয়েছে। তখন আমার মনে হল, ওঁরা তো এটা সহ্য করে গিয়েছেন। কিন্তু এটা ছেড়ে আমাকে আগে যেতে হবে অন্য জায়গায়, কিন্তু সঠিক দিশায়।’
শত্রুঘ্নর দাবি, এবার আর জনগণ ‘খামোশ’ থাকবে না। তিনি বলেন, ‘আমি তো চাই জনতা এবার যেন খামোশ না থাকে। চাই সবাই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলুক। এই যে জোরজুলুমের পর এমন স্তুতিগান শোনানো হচ্ছে, এই যে এত টাকা খরচ করা হচ্ছে মিথ্যা প্রচারের জন্য, এই যে একটা প্রতিশ্রুতিও সরকার পালন করেনি, আমি বলি জনতার তো আওয়াজ তোলাটাই সঠিক কাজ হবে। কেন খামোশ থাকবে? কতদিন ধরে ওদের মিথ্যে কথা আর প্রচারতন্ত্রের শিকার হবেন তাঁরা?’