আকাশে হেলিকপ্টার। নিচে এসপিজি। দফায় দফায় মহড়া। প্রধানমন্ত্রীর সভা নিয়ে মঙ্গলবার থেকে শহর জুড়ে ছিল কড়া নিরাপত্তা। মোদী এলেন, দেখলেন। তবে জয় আর হল না, স্রেফ সভা করেই ফিরে গেলেন তিনি। কারণ ১৫ বছর আগে এমনই এক ঝলসে যাওয়া দিনে জাতীয় সম্পদ খোয়ানোর খবর এসেছিল। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল পদক-সহ তাঁর ব্যবহার করা প্রচুর অমূল্য সম্পদ লুঠ হয়ে গিয়েছে। জাতীয় এবং প্রাদেশিক হরেক এজেন্সি তন্ন তন্ন করে খুঁজেও তা ফেরত পায়নি। সেই থেকে আজও শান্তিনিকেতনবাসীর মনে তীব্র অবসাদ। মোদীর ভাষণবাজীতে তা কমার নয়।
প্রসঙ্গত, তখনও কেন্দ্রে ক্ষমতায় ছিল বিজেপি। এখনও তাই। বরং এই রাজ্যে তুলনায় বেড়ে গিয়েছে অনেক সিবিআই তৎপরতা। কিন্তু তাতে নোবেল খোঁজার ব্যাপারে আর কোনও উচ্চবাচ্যই নেই তাদের। অন্যদিকে, আশ্রমিক থেকে ছোট দোকানদার, আদিবাসী স্কুল-কলেজের পড়ুয়া থেকে স্থানীয়দের একটি বড় অংশই চায়, চুরি যাওয়া নোবেল ফিরে আসুক। কিন্তু সে বিষয়ে আর কোনও আগ্রহই দেখাচ্ছে না কেন্দ্র। যা নিয়ে বিস্তর ক্ষোভ জমেছে জেলার বাসিন্দাদের মধ্যে। আর হবে নাই বা কেন? বাঙালি তো বটেই, ১৯১৩ সালে ভারতবাসী হিসেবে প্রথম নোবেল জয় করেন বিশ্বকবি।
উল্লেখ্য, পদকটি রাখা ছিল রবীন্দ্রনাথের নিজের হাতে গড়া শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী জাদুঘরে। নিরাপত্তায় গলদ ছিল। যার ফলে সকলের নজর এড়িয়ে নোবেল পদকটি খোয়া যায় ২০০৪ সালের ২৫ এপ্রিল। দিনটা ছিল রবিবার। তবে দিন তিনেক পরই বিষয়টি নজরে আসে। খবর পেয়েই পুলিশ এসে গোটা রবীন্দ্র ভবন ঘিরে ফেলে। দেখা যায়, শুধু নোবেল পদকই নয়, সেইসঙ্গে চুরি গেছে রৌপ্য পদক, সোনার আংটি, সোনার বোতাম, মৃণালিনী দেবীর শাড়ি, সোনা-বাঁধানো নোয়া, রুপোর রেকাবি-সহ আরও নানা জিনিস। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য প্রথমে সিআইডি ও পরে সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করেন। তাঁকে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিল কেন্দ্রের তৎকালীন বাজপেয়ী সরকার।
কিন্তু কোথায় কী? বাজপেয়ী হয়ে মোদী, হাওয়ায় উড়ে বেড়ায় নোবেল উদ্ধারে তাঁদের দেওয়া ভুয়ো প্রতিশ্রুতি। কিন্তু আজও শান্তিনিকেতনবাসীর ঘায়ে মলম লাগাতে পারেনি সেসব। কারণ, এখনও নোবেল বাড়ি ফেরে নাই।