২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালের শেষ ওভারে চার বলে চার ছক্কায় কার্লোস ব্রাথওয়েটের ব্যাটিং বিপ্লব দেখেছিল ইডেন। এ দিন ইডেন দেখল আর এক ক্যারিবিয়ানের কেরামতি। গায়ে জার্সিটাই যা কলকাতা নাইট রাইডার্সের, রক্ত তো সেই ক্যারিবিয়ানেরই। এই বারের আইপিএল মরশুমের প্রথম ম্যাচেই যেভাবে মাঠে রাজত্ব করল নাইট বাহিনী, এই ধারবাহিকতা বজায় রাখলে ফাইনালে কেকেআর যাবে এই কথা অতি রঞ্জিত লাগবে না। হায়দ্রাবাদকে কার্যত দুরমুশ করে দেওয়া হল কাল।
শেষ তিন ওভারে প্রয়োজন ৫৩ রান। যা এর আগে আইপিএলের কোনও দল রান তাড়া করার সময় করতে পারেনি। জমে যাওয়া ব্যাটসম্যান নীতীশ রানা আলো বিভ্রাটের ঠিক পরের বলেই আউট হয়ে গিয়েছেন। এই অবস্থায় দু’বল বাকি থাকতে, ছ’উইকেটে কলকাতা নাইট রাইডার্স যে ভাবে সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে হারিয়ে দিল, তা তো সাধারণত বলিউড স্ক্রিপ্টেই লেখা থাকে।
শেষ ৩ ওভারে সানরাইজার্সকে হারানোর জন্য তখন কেকেআরের প্রয়োজন ৫৩ রান। সেখান থেকে রাসেলের ব্যাটিং রংমশালে পুড়ে ছারখার চারমিনারের শহর। দু’বল বাকি থাকতেই হায়দরাবাদের জন্য ৬ উইকেটে মৃত্যু পরোয়ানা লিখে দিলেন রাসেল। ১৮১-৩ টপকাতে নেমে ১৮৪-৪। কোনও ক্রিকেট ম্যানুয়্যাল শেখায় না এই তাণ্ডব। রাসেলের ১৯ বলে ৪৯ নট আউটের মধ্যে চারটে বাউন্ডারি, চারটে ওভার বাউন্ডারি। পাওয়ার হিটিংয়ের আদর্শ বিজ্ঞাপন। মিস টাইমিংও উড়ে গেল গ্যালারির কোলে। কেকেআর শিবিরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, রাসেল নাকি শেষ ওভারে শুবমানকে একটা সিঙ্গলস নিয়ে স্ট্রাইক ঘোরাতে বলেছিলেন। কিন্তু শুবমান আশ্বস্ত করেন এই বলে যে, তিনিই ছক্কা মেরে ম্যাচ জেতাবেন। সাকিবকে শেষ ওভারে উপড়ে ফেলার ব্যাপারটা প্রতীকী। প্রাক্তন নাইটকে সরিয়ে এ যেন নাইটদের নতুন পথ চলা।
কার্যত বোবা বনে থাকা গ্যালারিতে আবার শোনা গেল, ‘কেকেআর, কেকেআর’ ধ্বনি। তবে অন্য ভাবে দেখলে, বুক ছ্যাঁত করে উঠতে পারে ভারতীয় ক্রিকেট সমর্থকদের। ভুবনেশ্বর কুমারকে ডেথ ওভারে ছাতু করে ২১ নেওয়া যায়, তা হলে! কেন উইলিয়ামসন চোটের জন্য না থাকায় এ দিন হায়দরাবাদের নেতৃত্বে ভুবনেশ্বর। ১৯ নম্বর ওভারে সেই ভুবিকে পাড়ার বোলারের স্তরে নামিয়ে আনলেন রাসেল। নিলেন ২১ রান। তার আগের ওভারে নিজামের শহরের আর এক পেসার সিদ্ধার্থ কল দিয়েছেন ১৯ রান। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১৩ রান। বেচারা সাকিব আল হাসান। ২ বল আগেই জোড়া ছক্কায় ৬ উইকেটে ম্যাচ নিয়ে গেলেন শুবমান গিল।
গত বছর আইপিএলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে এই ইডেনেই বড় ব্যবধানে হেরে ড্রেসিংরুমে না গিয়েই স্টেডিয়াম ছেড়েছিলেন বিরক্ত শাহরুখ খান। আর রবিবার বর্ণময় মেজাজে ইডেনে ধরা দিলেন ‘বাদশা’। নীতীশ রানা তখন সদ্য ফিরে গিয়েছেন। নাইটদের স্কোর তখন ১১৮-৪। কিন্তু আন্দ্রে রাসেলের ১৯ বলে ঝটিকা ৪৯ রানে সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে হারানোর পরে শাহরুখ আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না। বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতে গেলেন। প্রথমে দলের আর এক মালিক জুহি চাওলার হাতে চাপড় মেরে নাচতে শুরু করে দিলেন শাহরুখ। তার পরে মাঠে ঢুকে গোটা স্টেডিয়াম পরিক্রমা করে দর্শকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন তিনি। মাঠেই রসিকতায় মাতলেন দিনের নায়ক আন্দ্রে রাসেল ও নীতীশ রানার সঙ্গে। ড্রেসিংরুমে ফিরে মালকিন জুহি চাওলার সঙ্গে দলের প্রতিটি ক্রিকেটারকে শুভেচ্ছা জানিয়ে দেড় ঘণ্টা পরে খোশমেজাজে ইডেন ছাড়লেন কিং খান।