রাজ্যে ক্ষমতায় এসেই নারীশিক্ষার প্রসারে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া কন্যাসন্তানদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চালু করেন কন্যাশ্রী প্রকল্প। যা রাষ্ট্রসংঘের তরফ থেকে আন্তর্জাতিক পুরষ্কারও লাভ করেছে ইতিমধ্যেই। এই প্রকল্পে বিনিয়োগের বালাই নেই। নির্দিষ্ট সময় শেষে টাকা কন্যার অ্যাকাউন্টেই জমা পড়ে যায়। আর্থিক সাহায্যের সেই প্রকল্পের ঠেলায় এ রাজ্যে হালে পানিই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সুকন্যা সমৃদ্ধি।
প্রসঙ্গত, শিশুকন্যাদের শিক্ষায় আর্থিক সহায়তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার চালু করে সুকন্যা সমৃদ্ধি অ্যাকাউন্ট। স্বল্প সঞ্চয় হিসেবে এই প্রকল্পকে জনপ্রিয় করতে উদ্যোগী হন মোদী স্বয়ং। প্রথম দিকে, প্রকল্পটি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আগ্রহ থাকলেও, পরে এ রাজ্যে তা ক্রমশ ঝিমিয়ে পড়ছে। চলতি আর্থিক বছরের তৃতীয় ত্রৈমাসিক পর্যন্ত যে হিসেব মিলেছে, তাতে বাংলায় এই অ্যাকাউন্টে টাকা রাখায় উৎসাহ হারাচ্ছেন গ্রাহকরা। পরিসংখ্যান বলছে, যেখানে স্বল্প সঞ্চয়ে গত আর্থিক বছরে দেশের মধ্যে সবচেয়ে আগে ছিল বাংলা, সেখানে টাকা জমার নিরিখেই হোক বা অ্যাকাউন্ট চালু করা— দুই ক্ষেত্রেই সুকন্যা সমৃদ্ধিতে আগ্রহ হারিয়েছে বাংলা। কন্যাসন্তানদের আর্থিক সহায়তার কথা বলে কেন্দ্রীয় সরকার যে প্রকল্পের প্রচার করছে, তাতে বারবার সুদ কমানোর বিষয়টিকে ভালো চোখে নিচ্ছেন না কেউই।
মূলত ১০ বছর পর্যন্ত বয়সের কন্যাসন্তানের জন্য অভিভাবকরা সুকন্যা সমৃদ্ধি অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। পোস্ট অফিস বা ব্যাঙ্কে খোলা যায় এই অ্যাকাউন্ট। সেখানে বছরে দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত জমা করতে পারেন অভিভাবক। বছরে ন্যূনতম এক হাজার টাকা জমা করতেই হয়। না হলে ৫০ টাকা জরিমানা দিতে হয় গ্রাহককে। কন্যাসন্তানের ২১ বছর বয়স হলে, তারপর অ্যাকাউন্টের পুরো টাকা তোলা যায়। কন্যার ১৮ বছর বয়স পেরলে অ্যাকাউন্টে জমা হওয়া টাকার অর্ধেক তোলার অনুমতি পাওয়া যায়।
অন্যদিকে, মমতার চালু করা কন্যাশ্রীতে বিনিয়োগের বালাই নেই। নির্দিষ্ট সময় শেষেই সরকার প্রদত্ত টাকা কন্যার অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে যায়। আর্থিক মাপকাঠির বিচারে নয়, মুখ্যমন্ত্রীর কল্যাণে এখন সব মেয়েই পায় এই প্রকল্পের সুবিধা। এমনকি রূপশ্রী প্রকল্পেও মেয়েদের জন্য থোক টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে সরকার। যেখানে রাজ্যের প্রকল্পেই সরাসরি আর্থিক সুবিধা পাওয়ার সুযোগ থাকছে, তার প্রভাব সুকন্যা সমৃদ্ধির উপর পড়ছে কি না, সেই প্রশ্ন উড়িয়ে দিচ্ছেন না অনেকেই।
আবার, ক্ষমতায় আসার পর মোদী সরকার পরপর সাতবার স্বল্প সঞ্চয়ে সুদের হার কমিয়েছে। এর মধ্যে একাধিকবার কোপ পড়েছে সুকন্যা সমৃদ্ধির উপরও। স্বল্প সঞ্চয় এজেন্টদের বক্তব্য, সরকার গোড়া থেকেই এই অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য কোনও কমিশনের ব্যবস্থা করেনি। যেহেতু স্বল্প সঞ্চয় বা পোস্ট অফিসের সেভিংস প্রকল্পগুলি এজেন্টদের মাধ্যমেই করাতে অভ্যস্ত সাধারণ মানুষ, তাই সেভাবে অ্যাকাউন্টটি নিয়ে গা করেননি এজেন্টরাও। সেই কারণেই দিদির প্রকল্প যেখানে মন জিতে নিয়েছে সকলের, সেখানে মোদীর প্রকল্প ক্রমশ খেই হারাতে থাকে।
পরিসংখ্যান বলছে, গত আর্থিক বছরে দেশের মধ্যে এ রাজ্যে স্বল্প সঞ্চয়ের আদায় সর্বাধিক ছিল। মোট আদায় হয়েছিল ৮৯ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। দ্বিতীয় স্থানে উত্তরপ্রদেশ থাকলেও, আদায়ের নিরিখে পার্থক্য ছিল প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। রাজ্যের এহেন গৌরবের স্বল্প সঞ্চয়ে উল্টো হাওয়াই বইছে সুকন্যা সমৃদ্ধিতে।
সাধারণ মানুষ বলছেন, যে প্রকল্পে কন্যাসন্তানের আর্থিক ভিত্তি তৈরি করার কথা বলা হচ্ছে, তাতে সুদ কমানোয় মানুষ প্রকল্পটিতে আস্থা হারাচ্ছেন। এখন এই প্রকল্পে সুদের হার ৮.৫ শতাংশ। কিন্তু সেই সুদ বাড়ানো হয়েছে গত মাসে, ঠিক ভোটের আগে। তার আগে লাগাতার কমানো হয়েছিল প্রকল্পটির সুদ।