নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই দেশজুড়ে বারবার বিপন্ন হয়েছে বাকস্বাধীনতা। শুরু বিরোধীরাই নন, রাষ্ট্রীয় রোষের কবলে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। প্রশ্নের মুখে অবতীর্ণ হয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার। তাতে অবশ্য ‘থোড়াই কেয়ার’ শাসকদল বিজেপির। তৃতীয় মোদী সরকারের কার্যকালেই এক দেশ-এক ভোট পদ্ধতি লাগু করতে মরিয়া তারা৷ বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হল এক দেশ-এক ভোট পদ্ধতি প্রয়োগে৷ এই বিষয়ে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে বিল আনবে মোদী সরকার, বুধবার দিল্লীতে দাবি জানানো হয়েছে সরকারি সূত্রে৷ মোদী সরকারের এই উদ্যোগের তীব্র বিরোধিতা করেছে দেশের ১৫টি বিরোধী দল৷ দেশে গণতন্ত্রের পরিবর্তে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে উদ্যত হয়েছে কেন্দ্র, বুধবার একযোগে অভিযোগ জানিয়েছে বিরোধী দলগুলি৷ এর আগে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে এক উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছিল মোদী সরকার৷ দেশের কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে এক দেশ-এক ভোট নীতির প্রয়োগ নিয়ে তাদের অবস্থান জেনেছিল এই কমিটি৷ এর পরেই কমিটি তাদের রিপোর্ট তুলে দেয় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর হাতে৷
প্রসঙ্গত, সরকারি সূত্রের দাবি অনুযায়ী বুধবার নয়াদিল্লীতে আয়োজিত কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে পেশ করা হয় এই রিপোর্ট৷ গোটা রিপোর্টটি খতিয়ে দেখার পরেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা তাদের অনুমোদন দিয়েছে বলেই দাবি জানানো হয়েছে সরকারি সূত্রে৷ বিরোধী শিবিরের দাবি, লোকসভা ভোটের সঙ্গে একযোগে দেশের সব রাজ্যের বিধানসভা ভোটের আয়োজন করা একেবারেই অবাস্তব ভাবনা৷ কারণ, এক একটি রাজ্যের বিধানসভা এক এক সময়ে গঠিত হয়, তাদের মেয়াদ ভঙ্গও একসঙ্গে হয় না৷ লোকসভা নির্বাচন সব সময়ে যে প্রতি পাঁচ বছর অন্তরই হবে, তারও কোনও নিশ্চয়তা নেই৷ অনেক সময়েই দেখা যায়, মেয়াদ পূরণ হওয়ার আগেই ভেঙে যাচ্ছে লোকসভা৷ একই কথা প্রযোজ্য বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভার ক্ষেত্রে৷ তাহলে কীভাবে একসঙ্গে লোকসভা ও বিধানসভা ভোটের আয়োজন করবে মোদী সরকার? উঠছে প্রশ্ন। সারা দেশে এক দেশ-এক ভোট নীতি প্রয়োগ করার লক্ষ্যে যেভাবে এগোচ্ছে মোদী সরকার, তা পুরোপুরি অগণতান্ত্রিক একটি পদ্ধতি, বুধবার আরও একবার তোপ দাগা হয়েছে বিরোধী শিবিরের তরফে৷ দলের অবস্থান স্পষ্ট করে আরও একবার মোদী সরকারকে নিশানা করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও ব্রায়ান৷ তাঁর অভিযোগ, এক দেশ এক ভোট হল অগণতান্ত্রিক বিজেপির আর একটি সস্তার চমক৷ যে সরকার তিনটি রাজ্যের বিধানসভা ভোটের আয়োজন একসঙ্গে করতে পারছে না, তারা কীভাবে গোটা দেশের ভোটের আয়োজন একসঙ্গে করবে? “পুরো উদ্যোগটাই মোদী-শাহর ক্লাসিক জুমলা”, এই ভাষাতেই কটাক্ষ করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও ব্রায়ান৷ তৃণমূলের সুরে সুর মিলিয়েই এক দেশ-এক ভোট নীতির তীব্র বিরোধিতা করেছে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে৷ আরজেডি নেতা মনোজ ঝা-ও এর বিরোধিতায় মুখর হয়েছেন।