বৃহস্পতিবারই লন্ডনের ফিনান্সিয়াল টাইমস তদন্তমূলক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, আদানি গোষ্ঠী বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বিদেশ থেকে ৫০০ কোটি ডলারে মূল্যের কয়লা আমদানি করে, কাগজে-কলমে বাজার দরের তুলনায় দ্বিগুণ দাম দেখিয়েছিল। সেই মিথ্যে দামের ভিত্তিতেই চড়া বিদ্যুতের মাসুল নির্ধারিত হয়। তা আমজনতা ও কারখানার মালিকদের মেটাতে হয়। সেই সুবাদে খরচের তুলনায় ৫২ শতাংশ মুনাফা করে আদানি গোষ্ঠী। এ নিয়ে ইতিমধ্যেই হয়েছে কংগ্রেস, তৃণমূল সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলি। কংগ্রেস নতুন করে যৌথ সংসদীয় কমিটি বা জেপিসি-র তদন্তের দাবি তুলেছে। তৃণমূল প্রশ্ন তুলেছে, এই ক্ষেত্রে ইডি কী করছে?
কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বিবৃতি জারি করে বলেছেন, ‘এটা কোনও প্রতীকী লুট নয়। বাস্তবে ভারতীয়দের পকেট থেকে কোটি কোটি টাকা লুট।’ তাঁর অভিযোগ, এর আগে রাজস্ব গোয়েন্দা দফতর এই একই অভিযোগে তদন্ত করেছিল। প্রধানমন্ত্রী তার পরে সেটা সামলে নেন। তদন্তকারী সংস্থাকে নিষ্ক্রিয় করে দেন। কিন্তু সত্যিটা সামনে চলে এসেছে। আদানি গোষ্ঠী ২০১৯ থেকে ২০২১-এর মধ্যে ৩০টি জাহাজে ৩১ লক্ষ টন কয়লা আমদানি করেছে। ইন্দোনেশিয়া থেকে জাহাজ ছাড়ার সময় কয়লার ঘোষিত মূল্য ১,০৩৭ কোটি টাকা। সেই কয়লারই দাম ভারতে এসে শুল্ক দফতরকে জানানো হয়েছে ১,৫৪০ কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এনটিপিসি-ও আদানির থেকে কয়লা কিনেছিল। ফলে করদাতাদের টাকায় বেশি দামে কয়লা কেনা হয়েছে।
রমেশ বলেন, এর আগে আদানি গোষ্ঠী একই ভাবে চড়া দাম দেখিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন যন্ত্রাংশ আমদানি করছে বলেও কাগজে-কলমে দাবি করেছিল। সেই মিথ্যে দামের ভিত্তিতে বিদ্যুতের চড়া মাসুল ঠিক হয়। এখন বোঝা যাচ্ছে, কেন বিদ্যুতের দাম এত বেড়েছে। গুজরাত সরকারই জানিয়েছে, ২০২১ থেকে ২০২২-এর মধ্যে বিদ্যুতের মাসুল ১০২ শতাংশ বেড়েছে। মানুষের পকেট থেকে আদানিদের পকেটে টাকা যাচ্ছে। সেই টাকা প্রধানমন্ত্রীর উপকারে খরচ হচ্ছে। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ জহর সরকার বলেন, আদানি গোষ্ঠী কয়লা আমদানি করে ৪২ হাজার কোটি টাকা নয়ছয় করেছে। মোদীর ইডি কোথায়?’ তিনি এক্স হ্যান্ডলে ‘চোরে চোরে মাসতুতো ভাই’ বলে কটাক্ষ করেছেন। তাঁর প্রশ্ন, এ নিয়ে আগে তদন্ত হয়নি কেন! কেন শীর্ষ আদালতে এই মামলার অগ্রগতি হয়নি!
উল্লেখ্য, এত দিন আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নানা রকম অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে গৌতম আদানির ঘনিষ্ঠতা নিয়ে কংগ্রেস সরব হয়েছে। আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি সংবাদপত্রে প্রকাশিত বা গবেষণা সংস্থার তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে আদানিদের শেয়ার দরে কারচুপি, নিজের সংস্থার টাকা বিদেশে পাঠিয়ে আবার ঘুরপথে দেশে ফিরিয়ে এনে নিজের শেয়ারে লগ্নি করা নিয়ে রাহুল গান্ধী সংসদের ভিতরে-বাইরে সরব হয়েছেন। তাতে মোদী আদানিকে সুবিধা পাইয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ তুললেও, এ সবের ফলে সাধারণ মানুষের কী সমস্যা হচ্ছে, তা বোঝানো যায়নি। এবার আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কয়লা আমদানির খরচ ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানোর অভিযোগ ওঠায় কংগ্রেস-সহ বিরোধী শিবির মনে করছে, এতে সাধারণ মানুষও বুঝতে পারবেন যে তাঁরা প্রতারিত হয়েছেন।