এখনও বেপাত্তা খলিস্তানপন্থী নেতা অমৃতপাল সিং। চার দিন হল পলাতক তিনি। স্বভাবতই পুলিশের ব্যর্থতা নিয়ে পাঞ্জাব-হরিয়ানা হাইকোর্টে মঙ্গলবার কড়া সমালোচনার মুখে পড়ে রাজ্যের আম আদমি পার্টির সরকার। আশি হাজার পুলিশ মিলে একটা লোককে ধরতে পারছে না? এমনই প্রশ্ন তোলেন বিচারপতিরা। হাইকোর্ট যখন পাঞ্জাব সরকারকে চেপে ধরে তখন দিল্লীতে বাজেট নিয়ে বিধানসভায় প্রায় হাতাহাতি হওয়ার উপক্রম হয়েছিল আপ ও বিজেপির। অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র দফতরের বাধায় মঙ্গলবার দিল্লী সরকারের বাজেটও পেশ করা যায়নি। নজিরবিহীন সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুধবারও উত্তপ্ত রাজধানীর বিধানসভা। মঙ্গলবার সাসপেন্ড করা হয় প্রবীণ এক বিজেপি বিধায়কে। কিন্তু অমৃতপাল সিংকে নিয়ে বিজেপি নেতারা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার এত বড় অভিযোগ সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এখনও পর্যন্ত চুপ। দলগতভাবেও নির্বিকার গেরুয়াশিবির। তা আরও স্পষ্ট হয়েছে বুধবার পাঞ্জাব বিধানসভায়। অমৃতপালের সন্ধানে নেমে পুলিশ সাধারণ মানুষকে হেনস্থা করছে বলে অভিযোগ তুলে বুধবার অধিবেশন থেকে ওয়াকআউট করে অকালি দল। সেই দলের বিধায়ক মনপ্রীত ওয়ালি বলেন, অমৃতপালদের উপর থেকে প্রত্যাহার করতে হবে জাতীয় নিরাপত্তা আইনের মামলা।
এরপর বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস নেতা প্রতাপ সিংহ অভিযোগ করেন, অমৃতপালকে অমৃতসরের বাড়ি থেকেই পুলিশ গ্রেফতার করতে পারত। কিন্তু জলন্ধরে গিয়ে গ্রেফতারের নাটক করা হয়েছে সেখানে আসন্ন উপনির্বাচনের অঙ্ক মাথায় রেখে। মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে অধিবেশন থেকে ওয়াকআউট করেন প্রতাপ সিংহও। কংগ্রেস ও অকালি দল ওয়াকআউট করলেও বিজেপি সরকারের পাশেই থাকে। দলের বিধায়ক তথা রাজ্য সভাপতি অশ্বিনী শর্মার বক্তব্য, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে এক সুরে কথা বলা দরকার। পাঞ্জাব সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলি সমথর্ন করেন বিজেপি বিধায়ক। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, পাঞ্জাবে বিজেপির এহেন আচরণের পিছনে অন্য অঙ্ক কাজ করছে। বিজেপির এই রাজ্যে শক্তি সামান্য। তার উপর তিন কৃষি আইন নিয়ে কৃষক বিদ্রোহের জেরে দল আরও বিপাকে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস ও অকালির ভোট ব্যাঙ্কে ফাটল ধরাতে আপের সুরেই সুর মেলাচ্ছে তারা। পাঞ্জাবে খলিস্তানি আন্দোলনের থেকেও বড় সমস্যা যুব সমাজের মধ্যে মাদকের প্রভাব। কেন্দ্রীয় সরকার মাদক চোরাচালান আটকাতে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। পাঞ্জাবে মাদক ব্যবসা এবং খালিস্তানপন্থীদের পিছনে পাকিস্তানের হাত রয়েছে বলে গোয়েন্দাদের খবর। পাকিস্তান-অস্ত্রেও পাঞ্জাবে কংগ্রেস ও অকালিকে আক্রমণ করতে চাইছে বিজেপি। সেই কারণেই অমৃতপাল ইস্যুতে পাঞ্জাবের আপ সরকারের ব্যর্থতায় আশ্চর্যভাবেই নীরব রয়েছে পদ্ম-নেতৃত্ব।