বড়সড় বিপাকে পড়ল বঙ্গ বিজেপি। এবার আর্থিক বিষয় খতিয়ে দেখতে আসছে দলের কেন্দ্রীয় মনিটরিং টিম। পুরো বিষয়টিতে প্রবল ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় নেতারাও। এমনই খবর মিলেছে পদ্মশিবির সূত্রে। ওভারড্রাফট-কাণ্ডের জেরে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নিয়ে বঙ্গ বিজেপির বিড়ম্বনা আরও বাড়তে চলেছে বলেই অনুমান ওয়াকিবহাল মহলের। বিষয়টি নিয়ে মাথাব্যথা বাড়ছে দলের অন্দরেও। রাষ্ট্রায়ত্ত পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের ওই শাখা থেকে ইতিমধ্যেই টাকা তোলায় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। ৫০ কোটি টাকারও বেশি ওভারড্রাফট নেওয়ার সুবিধাযুক্ত ওই ‘কারেন্ট অ্যাকাউন্ট’ থেকে নেওয়া ঋণের বিশদ তথ্য তলব করে এবার ব্যাংকের তরফে রীতিমতো কড়া নোটিশও পাঠানো হয়েছে। দলের দক্ষিণ কলকাতা জেলার সভাপতিকে চিঠি পাঠিয়েছে ব্যাঙ্ক। ব্যাঙ্কের তরফে পাঠানো সেই চিঠি বা নোটিসে বিজেপির ওই কারেন্ট অ্যাকাউন্টের ( নম্বর : ০০৮৫০০২১০০০২২৮৯৩) প্রসঙ্গ তুলে বলা হয়েছে, অ্যাকাউন্টটি থেকে ৫০ কোটি টাকারও বেশি ওভারড্রাফট নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। চিঠি পাওয়ার পাঁচদিনের মধ্যে ওই অ্যাকাউন্ট থেকে ঋণ নেওয়া সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য বিশদে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে জানাতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে ব্যাঙ্কের রীতিমতো স্পষ্ট হুঁশিয়ারি, লেনদেনের ক্ষেত্রে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশিকা লঙ্ঘন ধরা পড়লে প্রয়োজনে ওই অ্যাকাউন্ট বন্ধও করে দেওয়া হতে পারে। ৫০ কোটি টাকার বেশি ক্রেডিটের সুবিধা নেওয়া হয়েছে বলেও স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে। রাজ্য বিজেপির এক পদাধিকারীর কথায়, বিষয়টি নিয়ে খুবই অসন্তুষ্ট কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
এপ্রসঙ্গে দক্ষিণ কলকাতা জেলা বিজেপির এক শীর্ষ পদাধিকারীর দাবি, “আমাদের ৫ থেকে ৫০ কোটি পর্যন্ত ওভারড্রাফট সুবিধা আছে। অন্য কোনও কোনও অ্যাকাউন্ট থাকলে পিএনবি তাদের ব্যাঙ্কে আমাদের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেবে বলে নোটিশ দিয়েছে। এটুকুই জানি। বাকিটা রাজ্য নেতৃত্ব বলতে পারবে।” সেক্ষেত্রে সংশয়, ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে বিজেপিকে ৫০ কোটির ক্রেডিট কেন? সাধারণের ক্ষেত্রে তো এই ছাড় দেওয়া হয় না? ফলে একটি রাজনৈতিক দলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৫০ কোটি টাকারও বেশি ওভারড্রাফট নেওয়ার সুবিধা থাকার বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অ্যাকাউন্টটি বিজেপির রাজ্য শাখার হওয়ার জন্যই কি বিধি ভেঙে এই বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে? বিষয়টিকে এড়িয়ে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যর বক্তব্য, ‘‘আমি এই বিষয়গুলি দেখি না। এগুলো আমার জানা নেই।’’ রাজ্য শাখার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জটিলতার খবর ইতিমধ্যেই দিল্লীতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে পৌঁছেছে। ফলে গোটা বিষয়টি নিয়ে বঙ্গ বিজেপিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আসছেন বলে খবর। বিপুল পরিমাণ টাকা ওভারড্রাফট করার সূত্রেই রাজ্য শাখার খরচ নিয়ে দলের শীর্ষমহলে চর্চা শুরু হয়েছে। রাজ্য সংগঠনের কোথায়, কত টাকা খরচ হয়, দলের তহবিল সংগ্রহের হাল কী, ব্যাংকের কাছ থেকে কেন এত ঋণ সংগ্রহের প্রয়োজন ইত্যাদি প্রশ্নগুলি সামনে এসেছে। ওভারড্রাফট সংক্রান্ত এই জটিলতার খবর প্রকাশ্যে আসায় দলের নিচুতলার কর্মীদের মধ্যেও শুরু হয়েছে গুঞ্জন।