কার্যত ধরাশায়ী হল রেড ডেভিলসরা। গোল-উৎসবের সাক্ষী রইল অ্যানফিল্ড স্টেডিয়াম। রবিবার কোডি গাকপো, ডারউইন নুনেজ এবং মহম্মদ সালাহ, লিভারপুল ত্রয়ীর দাপটেই চুরমার এরিক টেন হ্যাগের ছক। কাতার বিশ্বকাপের অভিষেক ম্যাচেই ফুটবলবিশ্বের নজর কেড়ে নিয়েছিলেন নেদারল্যান্ডসের নতুন তারকা গাকপো। তাঁর গোলেই ৪৩ মিনিটে এগিয়ে যায় লিভারপুল। তার পরে ক্রমাগত লিভারপুল ফুটবলারদের আক্রমণের মুখে নাস্তানাবুদ হয়ে পড়ে ম্যান ইউ রক্ষণ। যে ফুটবল দেখে প্রাক্তন ম্যান ইউ তারকা গ্যারি নেভিলের প্রতিক্রিয়া, ‘‘ম্যান ইউ ফুটবলাররা প্রমাণ করে দিল, এখনও ওদের খেলায় কতটা উন্নতির প্রয়োজন। না হলে লিভারপুলের মতো দলের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া যে কত কঠিন, এটা সম্ভবত এরিক টেন হ্যাগের চেয়ে ভাল কেউ বুঝবে না। এই বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠা সত্যিই খুব কঠিন।’’ উল্লেখ্য, খেতাবি দৌড় থেকে অনেকটা পিছিয়ে পড়া লিভারপুলের কাছে এই ম্যাচ ছিল নিজেদের আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার। সেই লক্ষ্যে ম্যাচের শুরু থেকে প্রতিআক্রমণ নির্ভর ফুটবলেই ম্যান ইউ রক্ষণকে প্রবল চাপে ফেলে দিলেন সালাহরা। ডাচ তারকা গাকপো নিজের দ্বিতীয় গোল করেন ৫০ মিনিটে। তার আগেই অবশ্য চোট সারিয়ে ফেরা উরুগুয়ের নতুন আবিষ্কার নুনেজ গোল করে যান। তিন গোলে পিছিয়ে পড়ার পরেই ম্যান ইউ দিশেহারা হয়ে পড়ে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে জোড়া গোল করেন সালাহ। ৭৫ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় তথা দলের পঞ্চম গোলটি করেন নুনেজ। গাকপোর পরিবর্ত হিসেবে খেলতে নামা ব্রাজিলীয় তারকা রবের্তো ফির্মিনো গোল করেন ৮৮ মিনিটে।
উল্লেখ্য, লিভারপুলের গোল-তাণ্ডবের মধ্যে অনেকেই খুঁজে পেয়েছেন ২০১১ সালে ইপিএলে ম্যান ইউ-এর কাছে আর্সেনালের ৮-২ গোলে হারের সাদৃশ্য। পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৩১ সালে উলভসের বিরুদ্ধে ০-৭ গোলে ম্যান ইউয়ের হারের পরে ফের নতুন ভাবে এক লজ্জার অধ্যায় যুক্ত হল ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের ইতিহাসে। তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। পুরো ম্যাচে ম্যান ইউয়ের গোল লক্ষ্য করে আটটি শট নিয়েছিল লিভারপুল। তার মধ্যে সাতটিই গোলে রূপান্তরিত হয়েছে। ২৫ ম্যাচে ৪৯ পয়েন্ট নিয়ে তিন নম্বরেই থাকল ম্যান ইউ। সমসংখ্যক ম্যাচ খেলে ৪২ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচ নম্বরে উঠে এল লিভারপুল। দলের অবিশ্বাস্য জয় নিয়ে লিভারপুল ম্যানেজার য়ুর্গেন ক্লপের মন্তব্য, ‘‘ফুটবলারদের বলেছিলাম এই ম্যাচে নিজেদের উজাড় করে দিতে। এটা শুধুই একটা ম্যাচ নয়, তার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে দুই ক্লাবের সম্মান এবং ঐতিহ্যের প্রশ্নও। আমার বক্তব্যের মর্মার্থটা ফুটবলাররা বুঝতে পেরেছে। তার চেয়ে বড় আনন্দ আর কিছু হতে পারে না।’’ ম্যাচের পরে উল্লসিত লিভারপুল তারকা সালাহ জানান, ‘‘এমন একটা জয়ের পরে কোনও প্রতিক্রিয়াই পর্যাপ্ত নয়। সতীর্থদের কাছে আমার বার্তা থাকবে, মাথা ঠান্ডা রেখে বাকি ম্যাচগুলো খেলতে হবে। আশা করছি, এমন একটা জয়ের পরে দল আগের চেয়ে অনেক বেশি চাঙ্গা হয়ে উঠবে।’’ উচ্ছ্বসিত আর এক তারকা জর্ডান হেন্ডারসনও। ‘‘নিঃসন্দেহে এমন একটা জয়ের উচ্ছ্বাস অন্য ধরনের হয়ে থাকে। তবে আমাদের পরের ম্যাচ নিয়ে এখন থেকেই মনঃসংযোগ করতে হবে’’, জানিয়েছেন ইংরেজ মিডফিল্ডার।
