ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বাংলার প্রতি দুয়োরানিসুলভ আচরণ অব্যাহত রেখেছে মোদী সরকার। একদা দেশের অনগ্ৰসর শ্রেণিভুক্ত পড়ুয়াদের জন্য বছরে ৮০০ টাকা করে দিত কেন্দ্র। কিন্তু সম্প্রতি সেই টাকা বন্ধ করে দিয়েছে শাসকদল বিজেপি। তবে, বাংলার অনগ্ৰসর শ্রেণিভুক্ত পড়ুয়াদের যাতে কোনও ক্ষতি না হয়, সে বিষয়ে যত্নশীল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘মেধাশ্রী’ প্রকল্প চালু করে দেন। সেই প্রকল্প অনুযায়ী রাজ্যের অনগ্ৰসর শ্রেণিভুক্ত স্কুলপড়ুয়ারা বছরে আগের মতোই ৮০০ টাকা করেই পাবে। তবে সবাই নয়। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অনগ্ৰসর শ্রেণিভুক্ত পড়ুয়াদের বছরে দেওয়া হবে ৮০০ টাকা করে বৃত্তি। কারা কারা সেই প্রকল্পের সুবিধা পাবে তার জন্য রাজ্য সরকারের তরফে রাজ্যের প্রতিটি স্কুলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পড়ুয়াদের স্বার্থে বৃত্তি পাওয়ার জন্য মেধাশ্রী পোর্টালে দ্রুত নাম তুলতে হবে। সেই নাম তোলার প্রক্রিয়া এখন রাজ্যজুড়েই শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেই নাম তোলার ক্ষেত্রে কিছু শর্ত অবশ্যই মানতে হবে। সেই সব শর্ত এবার সামনে আনল রাজ্য।
এপ্রসঙ্গে জানা গিয়েছে যে, রাজ্যের পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির তফসিলি জাতি ও উপজাতির শ্রেণির পড়ুয়াদের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ‘শিক্ষাশ্রী’ প্রকল্পে বার্ষিক ৮০০ টাকা করে বৃত্তি দেওয়া হয়। এবার অনগ্ৰসর শ্রেণিভুক্ত পড়ুয়াদের সমান পরিমাণ টাকা দেওয়া হবে ‘মেধাশ্রী’ প্রকল্পে। তবে তার জন্য প্রথম শর্তই হচ্ছে, ওই পড়ুয়ার পারিবারিক বার্ষিক আয় হতে হবে আড়াই লক্ষ টাকা বা তার নীচে। যে পড়ুয়া এই বৃত্তির জন্য আবেদন করছে তার নিজস্ব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। স্কুল কর্তৃপক্ষকে লক্ষ্য রাখতে হবে যে অনগ্ৰসর শ্রেণিভুক্ত পড়ুয়ার নাম পোর্টালে তোলা হচ্ছে সে যেন নিয়মিত স্কুলে আসে। তারপর সেই নাম খতিয়ে দেখবে মহকুমার অনগ্ৰসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর। সব শেষে সেই নামে জেলা প্রশাসন অনুমোদন দিলে তবেই আবেদনকারী পড়ুয়ার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যাবে বৃত্তির টাকা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চালু করা ‘কন্যাশ্রী’ ও ‘রূপশ্রী’ প্রকল্প দুটি রাজ্যে মেয়েদের মধ্যে স্কুলছুটের পরিমাণ যেমন অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে তেমনি রাজ্যে কমেছে বাল্যবিবাহের পরিমাণও। মুখ্যমন্ত্রীর সেই প্রয়াসকে আরও জোরালো করে তুলতে সাহায্য করছিল ‘শিক্ষাশ্রী’ প্রকল্প। এবার তার পাশাপাশি চালু হল ‘মেধাশ্রী’ও।
উল্লেখ্য, গত কয়েক বছর ধরেই বাংলায় দেখা যাচ্ছে যে মুখ্যমন্ত্রীর চালু করা আর্থসামাজিক প্রকল্পগুলির কল্যাণে স্কুলগুলিতে নিম্নবর্গের পরিবারের ছেলেমেয়েদের আসার সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা এইসব পরিবারের ছেলেমেয়েরা অনেকেই আবার প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। মেধাশ্রী প্রকল্প এই পড়ুয়াদের আরও স্কুলমুখী করে তুলবে বলেই মনে করছেন রাজ্যের স্কুল শিক্ষকরা। এই প্রকল্পের সুবিধা নিশ্চিতভাবে উপকৃত করবে রাজ্যের অনগ্ৰসর শ্রেণির পড়ুয়াদের, সেই বিষয়টি তাঁরা নিশ্চিত। কন্যাশ্রী, শিক্ষাশ্রী, মেধাশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে। শিক্ষিত সমাজের মধ্যেও এতদিন ধরে যে সামাজিক শ্রেণিবিন্যাস ছিল, এই প্রকল্পগুলি তা মুছে দেবে বলেই ধারণা বিশেষজ্ঞ মহলের। তাঁদের মতে, স্কুলছুট বন্ধ করা ও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও এই প্রকল্প অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠবে।