চব্বিশের লোকসভা নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, ততই মাথাব্যথা বাড়ছে পদ্মশিবিরের। সাংগঠনিক দুর্বলতার জেরে ঘনীভূত হয়েছে দুশ্চিন্তা। দলের নেতা থেকে কর্মী, সাংসদ থেকে বিধায়ক, সমর্থক থেকে ভোট ব্যাঙ্ক, সবাইকে চাঙ্গা রাখতে বার বার দিতে হচ্ছে ভোকাল টনিক। কিন্তু তার কোনও প্রভাব পড়ছে না কোনও সমীক্ষায়। প্রভাব পড়ছে না আমজনতা থেকে দলের সমর্থকদের মধ্যে। সর্বত্রই যেন ব্যর্থতার ছবি। সেই ছবি আবার আরও প্রকট হয়ে উঠেছে বিহার-বাংলা-উড়িষ্যার বুকে। এই তিন রাজ্যে মোট লোকসভা আসন সংখ্যা ১০৩। তার মধ্যে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ পেয়েছিল ৬৫টি আসন। যার মধ্যে বিজেপি একাই পেয়েছিল ৪৩টি আসন। এবার এই ৪৩টি আসন চূড়ান্ত অনিশ্চিত। তেমনই শরিকদের সমর্থনের সম্ভাবনাও সংশয়ে। আর যদি এই সব আসন হাতছাড়া হয়, তাহলে গতবারের ৩০৩ তো দূর অস্ত, ২৭২ আসনের ম্যাজিগ ফিগারও ছুঁতে পারবে না বিজেপি। ২০১৯ সালে সারা দেশ থেকে বিজেপি একাই জিতেছিল ৩০৩টি আসন। শরিকরা পেয়েছিল আরও ৫০টি আসন। সব মিলিয়ে কেন্দ্রের ক্ষমতায় দ্বিতীয়বারের জন্য ফেরা নরেন্দ্র মোদির সরকারের কাছে ছিল মোট ৩৫৩টি আসন। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি তাতে ২০২৪ সালে এই সংখ্যাটা ফেরত পাওয়াইও কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ছে মোদী সরকার তথা বিজেপির পক্ষে। কেননা গেরুয়া শিবিরের সব থেকে বড় ধাক্কা আসতে চলেছে পূর্ব ভারত থেকে। পূর্ব ভারতের ৪টি রাজ্য বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা ও ঝাড়খণ্ডের মোট আসন সংখ্যা ১১৭টি। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে সেই ৪ রাজ্য থেকে বিজেপি একাই জিতেছিল ৫৪টি আসন। এর মধ্যে বাংলা থেকে বিজেপি পেয়েছিল ১৮টি আসন, বিহার থেকে ১৭টি, ঝাড়খণ্ড থেকে ১১টি ও উড়িষ্যা থেকে ৮টি। সেই সময় বিজেপির পাশে শরিক দল হিসাবে বিহারে ছিল নীতিশ কুমারের সংযুক্ত জনতা দল, রাম বিলাস পাসওয়ানের লোক জনশক্তি পার্টি ও ঝাড়খণ্ডের আজসু। এই ৩টি দল পেয়েছিল যথাক্রমে ১৬, ৬ ও ১টি আসন।
তবে এবার চিত্রটা পুরোপুরি ভিন্ন। সেই ৩ শরিক দলের মধ্যে নীতিশ কুমার আগেই হাত ছেড়ে দিয়েছেন বিজেপি’র। রামবিলাস পাসওয়ানের দল কার্যত ছত্রভঙ্গ। আজসুর অবস্থাও একই। ২০২৪ সালে এদের ভোটব্যাঙ্কও বিজেপির পক্ষে থাকবে না বলেই ধরে নেওয়া যায়। এই অবস্থায় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের শীর্ষস্থানীয় নেতারা মনে করছেন, পূর্ব ভারতের ৪ রাজ্যেই কার্যত ভরাডুবি হতে চলেছে গেরুয়া বাহিনীর। যার মধ্যে সব থেকে বড় ধাক্কা আসতে চলেছে বিহার-বাংলা-উড়িষ্যা থেকেই। এই ৩ রাজ্যে তো বটেই ঝাড়খণ্ডেও কার্যত একা লড়তে হবে বিজেপিকে। তাই বাংলা থেকে আসন কার্যত চূড়ান্ত অনিশ্চিত। খুব জোর ৬টি আসন আসতে পারে বলে ধরেছেন সঙ্ঘ কর্তারা। বিহার থেকে সেই সংখ্যাটা ৫, ঝাড়খণ্ড থেকে ৪ ও উড়িষ্যা থেকে মাত্র ৩। সব মিলিয়ে পূর্ব ভারত থেকে বিজেপি পেতে পারে সর্বোচ্চ ১৮টি আসন যা ২০১৯ এর তুলনায় কার্যত এক তৃতীয়াংশ। বিজেপিকে হারাতে হতে পারে ৩৬টি আসন। আর শরিকদের আসন নিয়ে ধরলে কার্যত এক চতুর্থাংশেরও কম। এই শূন্যস্থান যদি লোকসভার ক্ষেত্রে মিলিয়ে দেখা যায় তাহলে দেখা যাবে বিজেপি আগের ৩০৩টি আসন থেকে নেমে আসতে পারে ২৬৭-এ। আর শরিকদের ধরলে ২৯৪টি আসন। কিন্তু মজা হচ্ছে শুধু পূর্ব ভারত থেকেই তো বিজেপির আসন কমছে না। কার্যত সারা দেশেই কমছে। পাশে নেই শরিক দলগুলিও। স্বাভাবিকভাবেই রাতের ঘুম উড়েছে পদ্ম-পরিবারের।