দীর্ঘদিন ধরে মহিলাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থানের জন্য অক্লান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার কাজেও সমান একাগ্রতা তাঁর। এবার সুন্দরবনের সেই প্রসেনজিৎ মণ্ডলের হাতে তুলে দেওয়া হল ‘আত্মনির্ভর ভারত বিকাশ রত্ন’ পুরস্কার। গত সোমবার, অর্থাৎ জানুয়ারির ৩০ তারিখে দিল্লীর রফি মার্গের স্পিকার হলে বসেছিল পুরস্কার বিতরণের আসর। সেখানেই প্রসেনজিতের হাতে এই সম্মান তুলে দেওয়া হয়। গোসাবা ব্লকের বালি ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্বপাড়ার বাসিন্দা প্রসেনজিৎ। সুন্দরবনের মানুষের কঠিন লড়াইয়ের সঙ্গে ভালোভাবেই পরিচিত তিনি। সেখানকার বেশিরভাগ মানুষের জীবিকা মাছ, কাঁকড়া, মধুসংগ্রহের উপর নির্ভরশীল। সেই কাজে যথেষ্ট ঝুঁকি রয়েছে। জলে কুমিরের হানা, ডাঙায় বাঘের হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে ফিরে আসাটাই শক্ত চ্যালেঞ্জ। যাঁরা পারেন না, রুজিরুটির জন্য পরনির্ভর হয়ে থাকতে হয় তাঁদের পরিবারকেও।
এপ্রসঙ্গে প্রসেনজিৎ জানিয়েছেন, একবার তাঁর বাবা সঙ্গীদের সঙ্গে কাঁকড়া ধরতে নদীখাড়ির দিকে গিয়ে বাঘের হামলার শিকার হন। সেদিন তাঁর বাবা ফিরে আসতে পারলেও কয়েকজন সঙ্গীকে টেনে নিয়ে যায় বাঘ। ওই সমস্ত পরিবারের মহিলাদের অসহায়তা দেখে কিছু করার চেষ্টা করবেন বলে পরিকল্পনা নেন প্রসেনজিৎ। প্রায় ৭ বছর আগে তাই তাঁর হাত ধরেই জন্ম হয় ‘সুন্দরবন ফাউন্ডেশন’ নামক এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার। স্থানীয় অসহায়, দরিদ্র বিধবা ও মায়েদের নিয়ে তিনি শুরু করেন ম্যানগ্রোভ রোপনের কাজ। বদলে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস, খাবার তুলে দেন। এভাবেই গোসাবা ব্লকের বালি ২ পঞ্চায়েত এলাকার বিভিন্ন নদীবাঁধে প্রায় পাঁচ লক্ষের বেশি ম্যানগ্রোভ চারা রোপণ করেছেন। শুধু তাই নয়, মহিলাদের মৌমাছি পালন করাও শেখাচ্ছেন তিনি। বর্তমানে এলাকার প্রায় পঞ্চাশ জন মহিলা মধু চাষ করে উপার্জন করছেন। একই সঙ্গে খাদি কাপড়ের সুতো কেটে ২৫০ জন মহিলাকে আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর করে তুলেছেন প্রসেনজিৎ। স্বাভাবিকভাবেই এলাকাবাসীর কাছে প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছেন তিনি।
