চলতি বছরের জুন মাসে আচমকাই বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে নবান্নে হাজির হয়েছিলেন তিনি। সোজা ১৪ তলায় গিয়ে দেখা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। সেই সময়েই মিলেছিল বরফ গলার ইঙ্গিত। আর
এবার রেলের অনুষ্ঠানে যেভাবে কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা করলেন মমতা তাতে অনেকেই মনে করছেন রাজনৈতিকভাবে গুরুত্ব বাড়ল শোভনের। অন্যদিকে, এই মুহূর্তে শোভন তাঁর বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ইন্দোরে রয়েছেন। সেখানে বসেই তিনি জেনেছেন, মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রের অনুষ্ঠানে তাঁর নাম নিয়েছেন। যা নিয়ে আপ্লুত শোভন।
শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জোকা-তারাতলা মেট্রো, যার আজ সূচনা হল, তা তাঁর স্বপ্নের প্রকল্প। সেই প্রসঙ্গেই তিনি বলেন, জমি সংগ্রহে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল শোভন চট্টোপাধ্যায়ের। সেইসঙ্গে বর্তমান মেয়র ফিরহাদ হাকিমেরও নাম করেন মমতা। এরপরই ইন্দোর থেকে সংবাদ মাধ্যমকে শোভন জানান সেই জমি নেওয়ার নেপথ্য কাহিনি। বলেন, ‘২০০৯ সালে রেলমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রকল্পের শিলান্যাস করিয়েছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিলকে দিয়ে। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। সেই সময়ে রাজ্য সরকারে তৃণমূল নেই। আবার মমতাদিও জোর করে চাষিদের থেকে জমি নেবেন না। তখন আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন পুরোটা করার।‘
যে পথ দিয়ে জোকা-তারাতলা মেট্রো হয়েছে, তার পুরোটাই ছিল চাষযোগ্য জমি। কথা বলে পুরো কাজটা করেছিলেন শোভন। তাঁর কথায়, ‘পুলিশের লাঠিও চালাতে হয়নি, কিন্তু সবটা হয়েছিল অশান্তি ছাড়াই।’ উল্লেখ্য, সেই সময়টাও ছিল তৃণমূলের কাছে চ্যালেঞ্জের। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের প্রেক্ষাপটে জমি আন্দোলনই তৃণমূলের জমি আরও মজবুত করছিল বাংলায়। সেই সময়ে যদি রেল প্রকল্প নিয়ে অন্য কিছু হতো তাহলে তা ব্যুমেরাং হতে পারত তৃণমূলের জন্য। আবার প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যাপারে একরোখা ছিলেন মমতাও। সেই সন্ধিক্ষণে শোভন যে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তা প্রায় এক যুগ পরও মনে রেখেছেন মমতা।
এদিন শোভন বলেন, ‘মমতাদি আমায় যখন যা নির্দেশ দিয়েছেন, আমি করেছি। দিদি যে আমার কথা মনে রেখেছেন, এটাই আমার কাছে গর্বের, অহঙ্কারের।’ তাঁর অকপট স্বীকারোক্তি, ‘রাজনৈতিক গুরুত্বের নিরিখে এগুলো আমি দেখি না। মমতাদির নির্দেশ বাস্তবায়িত করতে পারাই আমার কাছে গর্বের।‘ শোভন এ-ও বলেন, কাঠা প্রতি দাম নিয়েও চাষিদের সঙ্গে মতানৈক্য ছিল কেন্দ্রের। প্রথমে সেই সময়ে কেন্দ্রীয় সরকার কাঠা প্রতি জমির দাম ধার্য করেছিল ৮২ হাজার টাকা। কিন্তু পরে তৃণমূল বাংলার সরকারে আসার পর ভর্তুকি দিয়ে সেই দাম কাঠা পিছু ১ লক্ষ ২২ হাজার টাকা করে।