কয়লা পাচার কাণ্ডে অভিযুক্ত অনুপ মাজিকে জেরার নীলকালিতে হাতে লেখা বয়ানই এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় কয়লা পাচার মামলার চার্জশিটের কপি বলে ঘুরছে। এ নিয়েই এবার বৃহত্তর চক্রান্তের অভিযোগ তুলল তৃণমূল। শুধু তাই নয়। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ও বিজেপির সঙ্গে যোগসাজশে হওয়া এই চক্রান্তকে তাঁর বিরুদ্ধে ‘ফৌজদারি অপরাধ’ ধরে নিয়ে মামলা দায়ের করতে চলেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
বুধবার তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের দাবি, ‘চার্জশিটের কপি যদি আদালত থেকে তোলা হয় তবে তা অবশ্যই হবে জেরক্স এবং কালো কালিতে লেখা। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার ‘আংশিক সত্য’ কপিটি নীলকালিতে লেখা। তার অর্থ, জেরার পর অরিজিনাল কপি থেকে কেউ মোবাইলে ছবি তুলে বিজেপিকে পাঠিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, তা হলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ভিতরের কেউ কি আসল জেরার তথ্য রাজনৈতিক স্বার্থে বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছে? এমন হলে খুবই ভয়ংকর।’
প্রসঙ্গত, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দিনকয়েক আগে এক সাংবাদিক বৈঠকে চার্জশিটের এই অংশ উল্লেখ করে নাম না করে ‘প্রভাবশালী’ বলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেন। সেদিন শুভেন্দু জেরার ‘অংশ’ না বললে পরে তা দু’নম্বর প্রশ্ন বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। এই বিষয়টি নিয়ে প্রথমে টুইট করে পরে হলদিয়ায় সাংবাদিক বৈঠক করে বৃহত্তর চক্রান্তের অভিযোগ করেন রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল। বিজেপির তরফেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এই বয়ান ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে ইঙ্গিত করেন তিনি।
কুণালের দাবি, ‘জেরার দ্বিতীয় প্রশ্নটি ছড়িয়ে দেওয়া হলেও তৃতীয়টি সুকৌশলে চেপে যাওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় প্রশ্নে ছিল, ‘তুমি বার বার এবি-এর নাম নিয়েছ? এবি নাম শোনার পরই সঙ্গে সঙ্গে টাকা পাঠাতে?’ কিন্তু পরের পাতায় জেরার যে তৃতীয় প্রশ্ন ছিল এবং সেখানেই ‘এবি’র সঙ্গে যে কোনও বিন্দুমাত্র সম্পর্ক ছিল না তা স্পষ্ট থাকায় চক্রান্তকারীরা প্রকাশ করেনি।’
সেই পরের পাতা তুলে ধরে কুণাল বলেন, ‘তুমি কখনও এবি-এর সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছ? বা বিনয় মিশ্র, বিকাশ মিশ্রর মাধ্যমে তুমি এবি-র সঙ্গে বা ওঁর কোনও সহকারীর সঙ্গে কথা বলেছ?’ জেরার তৃতীয় প্রশ্ন ও উত্তরে উল্লেখ রয়েছে, ‘আমি কোনও দিন এবি’র সঙ্গে সরাসরি কথা বলিনি বা কখনও ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি।’ দু’টি প্রশ্ন ও উত্তরের পাতা হলদিয়ায় সাংবাদিক বৈঠকে তুলে ধরে কুণালের দাবি, ‘বিজেপি একতরফাভাবে চার্জশিটের পাতার নাম করে মিথ্যা প্রচার করছে। একটি প্রশ্নের উত্তর ছড়িয়ে দিচ্ছে। আমি এবার তিন নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর ওদের উপহার দিলাম।’
তথ্য তুলে ধরে তৃণমূল মুখপাত্রের স্পষ্ট দাবি, ‘চার্জশিটে যে অংশে ‘এবি’ অর্থে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম লেখা আছে, সেটাই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার পরের অংশেই রয়েছে যে জেরায় অনুপ মাজি জানিয়েছেন, তিনি কখনও ‘এবি’-কে দেখেননি। কখনও যোগাযোগও হয়নি। সেটি কিন্তু দেওয়া হয়নি।’ বিষয়টি পরিকল্পিতভাবে অভিষেকের বিরুদ্ধে বিজেপির বড়মাপের চক্রান্ত হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।