এখনও অব্যাহত তোলপাড়। ক্রমশ চড়ছে পারদ। দক্ষিণ ভারতে রাজ্যপাল পদ নিয়ে ঘনীভূত হচ্ছে উত্তাপ। কেরলের পর এবার তামিলনাড়ু ও তেলেঙ্গানাতেও মাথাচাড়া দিয়েছে ক্ষোভ। রাজ্যপাল মূলত মোদী সরকারের হাতের পুতুল – এই অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন তিন রাজ্যের নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীরা। তিন রাজ্যেই কেন্দ্রের পাঠানো রাজ্যপালের বিরুদ্ধে একাধিক প্রতিবাদ সমাবেশেরও আয়োজন চলছে। ঘটনাচক্রে, সাম্প্রতিক অতীতে এই একই সুরে রাজ্যপালের বিরোধিতা করতে দেখা গিয়েছিল বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এবার তার রেশ ছড়াল দক্ষিণেও। মঙ্গলবার তামিলনাড়ুর শাসকদল ডিএমকে সরাসরি আক্রমণে বিদ্ধ করেছে তেলেঙ্গানার রাজ্যপাল তামিলিসাই সৌন্দররাজনকে। গুরুতর অভিযোগ করে বলা হয়েছে, তেলেঙ্গানার রাজ্যপাল অন্য রাজ্যের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছেন। উল্লেখ্য, তামিলনাড়ুর একজন বিজেপি নেত্রী হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিলেন তামিলিসাই। দীর্ঘদিনের এই বিজেপি নেত্রীকেই তেলেঙ্গানার রাজ্যপাল করে পাঠিয়েছে মোদী সরকার। শুধু তামিলনাড়ুই নয়, তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের সরকারের সঙ্গেও তামিলিসাই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ নিয়ে মতানৈক্যে জড়িয়েছেন। রাজ্যপালের বিরুদ্ধে গলা চড়িয়েছে টিআরএস।
পাশাপাশি, ডিএমকের মুখপত্র মুরাসলিতে কড়া ভাষায় আক্রমণ করা হয়েছে প্রতিবেশী রাজ্য তেলেঙ্গানার রাজ্যপালকে। লেখা হয়েছে, ‘‘তেলেঙ্গানার রাজ্যপালের তামিলনাড়ু নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়। এটা তাঁর কাজ নয়। তিনি বরং রাজ্যপালের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে তামিলনাড়ুতে ফিরে রাজনীতি করতে পারেন।’’ তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল আরএন রবির দিকেও তীব্র আক্রমণ শানিয়েছে ডিএমকের মুখপত্র। লেখা হয়েছে, ‘‘তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল সমস্ত সীমা অতিক্রম করে যে সমস্ত মন্তব্য করে চলেছেন তাতে সর্বস্তরে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।’’ এর আগে সংবিধান বিরোধী কাজের অভিযোগে সমস্ত সমমনস্ক সাংসদদের আরএন রবিকে বরখাস্ত করতে প্রস্তাব পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছিল ডিএমকে। তেলঙ্গানাতেও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ সংক্রান্ত একটি বিল সই না করে ফেলে রাখার অভিযোগে সরব হয়েছেন চন্দ্রশেখর রাও। একই পরিস্থিতি কেরলেও। সেখানে বেশ কিছু দিন ধরেই সিপিএম সরকারের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েছেন কেরলের রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান। সম্প্রতি সেই ঘটনায় বাড়তি ইন্ধন যোগ করে রাজ্যপালের সাংবাদিক বৈঠক থেকে দুই মালয়ালি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিককে বার করে দেওয়ার ঘটনা। রাজ্যপাল পদের মাধ্যমে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যের সরকারগুলির উপর চাপ তৈরি করতে চাইছে – এই মন্তব্য প্রথম করেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময় রাজ্যের রাজ্যপাল ছিলেন জগদীপ ধনকর। যাঁর সঙ্গে রাজ্য সরকারের নিত্য বিবাদ লেগেই থাকত। রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের নেতারা প্রকাশ্যেই রাজ্যপালকে ‘পদ্মপাল’ বলে কটাক্ষ করতেন। তাঁদের অভিযোগ ছিল, রাজভবনকে এককথায় বিজেপির দলীয় কার্যালয় বানিয়ে ফেলেছেন ধনকর। যা নিয়ে উঠেছিল বিতর্কের ঝড়। এবার মমতার সুরেই সুর মেলালেন কেরল, তেলেঙ্গানা ও তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীরা।
