এ যেন কোনও বলিউড বা হলিউডের ছবির টান টান দৃশ্য! দূর থেকে ট্রেনের দেখা মিলতেই তড়িঘড়ি রেলগেট বন্ধ করছেন গেটম্যান। আর ঠিক সেই সময় রেল লাইনের ফাঁকে আটে যায় টোটোর চাকা। টোটোর ভিতরে ছিলেন ৩ অন্তঃসত্ত্বা মহিলা। প্রাণপণে টোটো লাইন থেকে তোলার চেষ্টা করছিলেন টোটোচালক। কিন্তু, কোনওভাবেই পেরে উঠছেন না। এমনকী, টোটোচালকের ওই করুণ অবস্থা দেখেও এগিয়ে আসছেন না কেউই। আশপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছেন অনেকেই, তবে তাঁদের কারও কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। এই অবস্থায় কী করবেন কিছুই ভাবতে পারছিলেন না টোটোচালক। এদিকে টোটো না বের হওয়ায় রেলগেটও বন্ধ করতে পারছিলেন না গেটম্যান। সেই সময়েই হিরোর মতো এন্ট্রি নেন মেমারি পুরসভার পুরপ্রধান স্বপন বিষয়ী। টোটো চালকের করুণ পরিণতি দেখে তা নিজেই ঠেলে তোলেন তিনি। পূর্ব বর্ধমানের মেমারির ইলামপুরে ট্রেন আসার ঠিক আগেই এই ঘটনা ঘটে।
প্রসঙ্গত, পুরসভা এলাকাতেই পূর্ব রেলের হাওড়া-বর্ধমান মেন শাখার মেমারি স্টেশনটি। মেমারি শহরের মধ্যেই ইলামপুর, মেমারি বাজার ও জিটি রোডের উপরে রয়েছে রেলের লেভেল ক্রসিং। সোমবার ঘড়ির কাঁটায় তখন বেলা সাড়ে ১১টা। ঠিক সেই সময় ইলামপুর লেভেল ক্রসিংয়ের কাছে ট্রেবনের খবরও হয়ে গিয়েছিল। গেটম্যান গেট নামাতেও শুরু করে দিয়েছিলেন। আর সেই সময় একটি টোটো লেভেল ক্রসিংয়ে তিন অন্তঃসত্ত্বাকে নিয়ে আটকে পড়ে। সেখানে থাকা একটি গর্তের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিল টোটোর চাকা। যার ফলে সেই টোটো কোনও ভাবেই এগোতে পারছিল না। অনেক ধাক্কা দিয়েও টোটো গর্ত থেকে তুলতে পারছিলেন না চালক। এ দিকে টোটো সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য গেটম্যানও চিৎকার করছিলেন নইলে তিনিও গেট বন্ধ করতে পারছিলেন না। পথচলতি কেউ ওই টোটোচালককে সাহায্যও করেননি।
সেই সময় টোটো চালককে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন পুরসভার পুরপ্রধান স্বপন বিষয়ী। সরকারি কাজে সেই সময় ক্রসিং পার হচ্ছিলেন তিনি। আর তখনই ঘটে গিয়েছিল এই ঘটনা। সেই সময় টোটোচালককে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন তিনি। পথচলতি এক ব্যক্তিকে দাঁড় করিয়ে দু’জনে মিলে পিছন দিক থেকে যাত্রীবোঝাই টোটোটিকে ঠেলতে শুরু করেন। তাতেই কাজ হয়। টোটোটির চাকা গর্ত থেকে উঠে যেতেই চালক সেটিকে দ্রুত লেভেল ক্রসিং পার করিয়ে নেন। এই ঘটনা প্রসঙ্গে পুরপ্রধান বলেন, ‘এটা আমার কর্তব্য। মানুষ আমাদের জনপ্রতিনিধি করেছে পরিষেবা দেওয়ার জন্য। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে আমরা এ কাজ করেছি। রেলের উদাসীনতার বিরুদ্ধে এই লড়াই আমাদের চলবে। কেন্দ্র যেখানে বুলেট ট্রেন চালাচ্ছে। সেখানে লেভেল ক্রসিংগুলোর অবস্থা বেহাল। পিচ বলতে কিছু নেই। ১০ ইঞ্চির বেশি গর্ত হয়ে গিয়েছে যত্রতত্র। আমরা ঠিক করতে গেলেও রেল কাজ করতে দিচ্ছে না। এ নিয়ে আমি রেলকে চিঠি দেব।’