জ্বালানির আকালে সারা দেশের যাত্রী পরিবহণ থেকে পণ্য পরিবহণ কার্যত স্তব্ধ। তৈরি হয়েছে তীব্র খাদ্য সংকট। সব মিলিয়ে শ্রীলঙ্কায় এখন দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি। আর এর মূলেই রয়েছে মুদ্রাস্ফীতি। কারণ তা থেকেই তৈরি হয়েছে এই চূড়ান্ত অর্থনৈতিক সঙ্কট। যার কোপ পড়েছে রাজনীতি থেকে সমাজের সর্বক্ষেত্রে। শ্রীলঙ্কার মতো প্রতিবেশী ভারতেও এখন চলছে মুদ্রাস্ফীতি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, যে ভারতেরও কি একই হাল হতে পারে? শ্রীলঙ্কা থেকে ঠিক কী কী শিক্ষা নিতে পারে দেশ?
প্রসঙ্গত, বহু বছর ধরে ধীরে ধীরে এই প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে শ্রীলঙ্কায়। শেষের এই চরম সঙ্কটের কারণ সাম্প্রতিক একটি ধাক্কা। শ্রীলঙ্কার ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বদলই দেশটিকে দেউলিয়া হওয়ার পথে ঠেলে দিয়েছে। একটা বড় কারণ অবশ্যই শ্রীলঙ্কার সরকারের মাত্রাছাড়া ঋণ নেওয়ার প্রবণতা। যা দেশের গড় উৎপাদন ক্ষমতাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে। ঋণ নিতে নিতে তার ধরনও কালক্রমে বদলাতে হয়েছে। বিশেষ সুবিধা এবং সুদে ছাড় পাওয়া ঋণের সীমা অতিক্রম করে ফেলে শ্রীলঙ্কা। ফলে তার পর বাণিজ্যিক ঋণ নিতে হয়। যার সুদের হার অনেক বেশি। ঋণ শোধের মেয়াদও কম।
এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সরকারের ভ্রান্ত নীতি। রাজাপক্ষে সরকার ২০১৯ সালে দেশে বিভিন্ন করের উপর বড় মাপের ছাড় ঘোষণা করেছিল। ভোটের আগে প্রচারে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন রাজাপক্ষে। যা কার্যকর করার পর টান পড়ে রাজকোষে। অন্যদিকে, শ্রীলঙ্কার মূল উপার্জনের ক্ষেত্র ছিল পর্যটন। ২০১৯ সালের ইস্টারের সময় শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাস এবং তপরবর্তী অতিমারি পরিস্থিতি তাতেও থাবা বসিয়েছে। আবার, ভারতে এখন যে মূল্যবৃদ্ধির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। রান্নার গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানির দাম উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। শ্রীলঙ্কা সরকার নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করার কিছু দিন আগে সে দেশেও এমন হয়েছিল।
যদিও ভারতের এই মুহূর্তেই শ্রীলঙ্কা হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। কারণ ৬০ হাজার কোটি ডলারের বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার মজুত রয়েছে। যার দৌলতে আগামী এক বছরের জন্য বিদেশি পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কোনও চিন্তা নেই। তবে গত আট বছরে ভারতের গৃহীত ঋণের পরিমাণও বেড়েছে। ২০১৩ সালে যেখানে ৪০ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের ঋণ ছিল ভারতের, সেখানে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার রিপোর্ট জানাচ্ছে, ২০২১ সালে ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। দেশের বাজারে অন্যতম বড় সমস্যা মূল্যবৃদ্ধি। ভয়ঙ্কর মূল্যবৃদ্ধিতে ভুগছে প্রতিবেশী দ্বীপরাষ্ট্রও। কিন্তু দুই দেশের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য।