এ যেন মগের মুলুক! বিচারব্যবস্থাকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা! হ্যাঁ, এবার বেঙ্গালুরুর প্রাক্তন ডেপুটি কমিশনার এবং দুর্নীতিদমন শাখার (এসিবি) এডিজিপি-র বিরুদ্ধে দুর্নীতি তুলে ধরায় কর্ণাটক হাই কোর্টের বিচারপতি এইচ পি সন্দেশকে বদলির হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল! নিজেই এই অভিযোগ তুলে কর্ণাটকের বিজেপি সরকারকে ভর্ৎসনা করেছেন বিচারপতি এইচ পি সন্দেশ। একইসঙ্গে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, যতই চাপ দেওয়া হোক, তিনি মাথা নোয়াবেন না। বিচারব্যবস্থার মর্যাদা রক্ষায় তিনি বদ্ধপরিকর।
এই ঘটনায় সরব হয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তাঁর টুইট, ‘একের পর এক প্রতিষ্ঠান বিজেপি গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। যাঁরা নির্ভয়ে তাঁদের কর্তব্য পালন করছেন, আমাদের প্রত্যেককে তাঁদের পাশে থাকতে হবে।’ অন্যদিকে, বিচারপতি ক্ষোভ প্রকাশের পরেই ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে বেঙ্গালুরু সিটি ডেপুটি কমিশনার মঞ্জুনাথ জে-কে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁকে সাসপেন্ড করেছে রাজ্য সরকার।
প্রসঙ্গত, আদালতে গত শুনানিতে বিচারপতি সন্দেশ জানতে চান, এসিবি-র এডিজিপি পোস্টিংয়ের আগে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা বাসবরাজ বোম্মাইয়ের সরকার খতিয়ে দেখেছে কি না। কারণ, এর আগে পুলিশ সুপার থাকাকালীন ওই আইপিএস অফিসারের বিরুদ্ধে তল্লাশি চালিয়েছিল সিবিআই। এর পাশাপাশি বিচারপতি এসিবি-র কাছে জানতে চান, কতগুলি তল্লাশি পরোয়ানা জারি করা হয়, তার মধ্যে কতগুলি ক্ষেত্রে সত্যিই তল্লাশি চালানো হয়েছে এবং কতগুলি ক্ষেত্রে প্রাথমিক তদন্তে তথ্যপ্রমাণ না মেলায় চার্জশিট পেশ করা যায়নি (‘বি’ রিপোর্ট)।
প্রসঙ্গত, পাঁচ লক্ষ টাকা ঘুষ নেওয়ার সময়ে হাতেনাতে ধরার পড়েন ডেপুটি কমিশনার। তাঁর জামিনের আবেদনের শুনানি চলাকালীনই ক্ষোভ উগরে দেন বিচারপতি। বিচারপতি জানান, সহকর্মী এক বিচারপতির থেকে তিনি জেনেছেন, এর আগে দুর্নীতি সংক্রান্ত এমনই এক মামলায় বিচারপতিকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছিল। ঘটনাটিকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার উপরে হস্তক্ষেপ বলে সরব হয়েছেন বিচারপতি সন্দেশ।
তাঁর কথায়, ‘বিচারব্যবস্থাকে সুরক্ষিত রাখা আমার কর্তব্য। একমাত্র সংবিধানের প্রতিই আমি দায়বদ্ধ। দেখতে চাই, সংবিধান নাকি উত্তর ভারতের ওই আইপিএস— কে বেশি ক্ষমতাবান।’ এর পরেই তিনি জানান, কোনও রকম হুমকির কাছে মাথানত করবেন না। এক জন চাষির ছেলে হিসাবে প্রয়োজনে চাষ করবেন কিন্তু অপমান সহ্য করবেন না। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হতে লালায়িত নন বলেও উল্লেখ করেছেন বিচারপতি সন্দেশ। তাঁকে হুমকির ঘটনা মামলায় যুক্ত করা হবে বলেও জানান।
এসিবি-কে ‘কালেকশন সেন্টার’ বলে ভর্ৎসনা করেছেন বিচারপতি। একই সঙ্গে এসিবি-র এডিজিপি সীমন্থ কুমার সিংহ-কে কলঙ্কিত অফিসার বলেও উল্লেখ করেন। হুমকি প্রসঙ্গে বিচারপতি জানান, তিনি ভীত নন। তাঁর কথায়, ‘বিচারপতি হওয়ার পরে নিজের সম্পত্তি বাড়ানোর চেষ্টা করিনি। তাই পদ চলে গেলেও কিছু যায় আসে না।’