বেশ কিছুদিন ধরেই কিডনি ও ফুসফুস জনিত সমস্যায় ভুগছিলেন কিংবদন্তি পরিচালক তরুণ মজুমদার। আজ তিনি চলে গেলেন। তবে রেখে গেলেন তাঁর সমস্ত কীর্তি। প্রায় ১৯ দিন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে লড়াইয়ের পর নবতিপর চিত্র পরিচালক তরুণ মজুমদারের চোখে নেমে এসেছে মৃত্যুঘুম। সে ঘুম যে আর ভাঙার নয়। সোমবার সকালে এসএসকেএম হাসপাতালে প্রয়াত হন বাংলা চলচ্চিত্র জগতের ৯১ বছরের প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব। সপ্তাহের প্রথম দিন কর্মব্যস্ততার মাঝে এই খবর টলিপাড়ায় পৌঁছতে দেরি হয়নি একটুও। দুঃসংবাদে শুনে মন অস্থির হয়ে ওঠে টলিউড অভিনেত্রী তথা তরুণ মজুমদারের অন্যতম নায়িকা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। সংবাদমাধ্যমকে কান্নাভেজা গলায় অভিনেত্রী শুধু এটুকুই বললেন, ”আমি ওঁর সঙ্গে ‘আলো’, ‘চাঁদের বাড়ি’ ছবিতে কাজ করেছি। সম্প্রতি ‘ভালবাসার বাড়ি’তেও কাজ করেছি। খবরটা শোনার পর থেকে মনটা বড় অস্থির হয়ে আছে। খুব বড় ক্ষতি হয়ে গেল।”
মধ্যবিত্তের আবেগ উসকে দিয়ে দর্শকদের এক অন্য জগতে নিয়ে যেত তরুণ মজুমদারের ছবি। দর্শককে ধরে রাখার অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল তাঁর। ‘বালিকা বধূ’, ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’, ‘দাদার কীর্তি’ – নাম লিখতে শুরু করলে বোধহয় শেষ হওয়ার নয়। আজকের দিনে তাঁর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা, তাঁর সঙ্গে সিনেমা নিয়ে স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বসলেন অভিনেত্রী শতাব্দী রায়। তাঁর কথায়, ”তরুণ মজুমদারের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাই আলাদা। তাঁর সেন্স অফ হিউমার অত্যন্ত ভাল ছিল। কথা বলার ভঙ্গিমাও ছিল দারুণ। গল্প বলতেন কাজের ফাঁকে ফাঁকে। মানুষ হিসেবে দারুণ ছিলেন। কাজের সময় ভুল হলে আমাদের শাসন করতেন, শাস্তি দিতেন। কিন্তু আমরা তার জন্য অখুশি হতাম না, শিখতাম। এত মিষ্টি প্রেমের ছবি যে হতে পারে, তা তাঁর সিনেমা না দেখলে বোঝা যায় না।” পরিচালক তরুণ মজুমদারকে অবশ্য খাঁটি পরিচালকের দৃষ্টি দিয়েই দেখেছেন গৌতম ঘোষ।
এদিন প্রবীণ পরিচালকের প্রয়াণ সংবাদ শুনে বিশ্বাসই হচ্ছিল না তাঁর। প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে তিনি বললেন, ”এটা কি ক্ষতি নাকি অন্য কিছু? আমি কিছুই বলতে পারছি না। এত ভাল করে ছবি বানাতেন, এত নিয়মানুবর্তিতার সঙ্গে কাজ করতেন, এমনটা সাধারণত দেখা যায় না। বিভিন্ন স্বাদের ছবি বানাতেন। অনেক কিছু শিখেছি তাঁর থেকে। চিরকাল তাঁকে মনে রাখব আমরা। জুনিয়রদেরও শ্রদ্ধা করতেন তরুণ মজুমদার। আক্ষেপের শেষ নেই। তবে এ তো নিয়তি। মেনে নিতেই হবে।” বর্ষীয়ান পরিচালকের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে শোকবার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লিখেছেন, ”বিশিষ্ট চিত্রপরিচালক তরুণ মজুমদারের প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি আজ কলকাতায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। ভিন্নধারার রুচিসম্মত সামাজিক চলচ্চিত্র নির্মাণে তরুণ মজুমদার উজ্জ্বল নিদর্শন রেখে গিয়েছেন। তাঁর ছবিতে রবীন্দ্রসংগীতের প্রয়োগ দর্শককে আবিষ্ট করে রাখে। তরুণ মজুমদার পরিচালিত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র ‘বালিকা বধূ’, ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’, ‘ফুলেশ্বরী’, ‘দাদার কীর্তি’, ‘ভালবাসা ভালবাসা’, ‘সংসার সীমান্তে’, ‘গণদেবতা’, ‘শহর থেকে দূরে’, ‘পথভোলা’, ‘চাঁদের বাড়ি’, ‘আলো’ ইত্যাদি উল্লেখের দাবী রাখে। তিনি পদ্মশ্রী, জাতীয় পুরস্কার, বিএফজেএ পুরস্কার, ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড-সহ বিভিন্ন পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। তাঁর প্রয়াণে সকলে মর্মাহত।