চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই দ্রুত অগ্রগতি বিষ্ময় তৈরি করে। প্রত্যেকদিন কত বহু অসাধ্য সাধন করছেন ডাক্তারবাবুরা। প্রাণ ফিরে পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তেমনই ছোট্ট শিশুর ফুসফুসে আটকে গেছিল দেড় সেন্টিমিটারের মাদুলি! শ্বাস নিতে পারছিল না সে, শরীরে কমছিল অক্সিজেনের মাত্রা। বিপদ বাড়ছিল ক্রমে। মাইথনের বাসিন্দা ওই শিশুকে প্রথমে বর্ধমানে ভর্তি করা হয়, তার পরে রেফার করা হয় পিজি-তে। শেষমেশ ব্রঙ্কোস্কোপি করে তা বার করে নজির গড়ল এসএসকেএম। এখন সুস্থ আছে সে।
১৭ এপ্রিলের ঘটনা। মাইথনের বাসিন্দা তপন রুদ্রের মেয়ে ইন্দ্রাণী তার গলায় ঝোলানো মাদুলিটি মুখে নিয়ে গিলে ফেলে। প্রথমটায় কিছু বোঝা যায়নি সমস্যা। সকলে ভেবেছিলেন, পেটে চলে গেছে, মলত্যাগের সঙ্গে সেটি বেরিয়ে যাবে। কিন্তু তা বেরোয়নি। উল্টে কয়েক দিন পরে শিশুটির কাশি শুরু হয়। এর পরেই তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায় পরিবার।
ডক্টর অরুণাভ সেনগুপ্তর নেতৃত্বে চিকিৎসক অরিন্দম দাস, অঙ্কিত চৌধুরী এবং অ্যানাস্থেটিস্ট মেঘা চট্টোপাধ্যায় ব্রঙ্কোস্কপি করে সেই মাদুলি বার করেন। ডাক্তারবাবুরা জানিয়েছেন, টেলিস্কোপ পদ্ধতিতে ব্রঙ্কোস্কপি করে অনেক সময়ে ঠিকঠাক জায়গায় পৌঁছতে সমস্যা হয়। সাধারণ ব্রঙ্কোস্কোপির মাধ্যমেই সেটা সুবিধাজনক। এভাবেই দেড় সেন্টিমিটার লম্বা মাদুলিটি বার করা হয় ইন্দ্রাণীর ফুসফুস থেকে। তার পরে তার শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিক হয়।
তপন রুদ্র জানিয়েছেন, আসানসোলে নিয়ে গিয়ে মেয়েকে ডাক্তার দেখান, তাঁর পরামর্শমতো স্ক্যান করিয়ে দেখা যায়, শ্বাসনালিতে আটকে আছে মাদুলি, ফুসফুস পর্যন্ত চলে গিয়েছে সেটি। এরপরেই তড়িঘড়ি বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করা হয় তাকে। সেখানেই টেলিস্কোপের মাধ্যমে ব্রঙ্কোস্কোপি করা হয় মে মাসের ৩ তারিখে। কিন্তু মাদুলি বার করা সম্ভব হয়নি।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তরফে সম্প্রতি নিয়ম করা হয়েছে, কোনও সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগীকে অন্যত্র রেফার করলে সেখানে তাঁর চিকিৎসা পাওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালকেই। তাই সেই নিয়মমতো ফুসফুসে মাদুলি আটকে থাকা একটি শিশুকে এসএসকেএমে রেফার করার পাশাপাশি সেখানকার চিকিৎসকদের ফোন করেও বিষয়টি জানান বর্ধমানথ মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকেরা। রোগী চিকিৎসাপদ্ধতিও লিখিত আকারে পাঠানো হয়।
পিজি-র ইএনটি বিভাগের প্রবীণ চিকিৎসক অরুণাভ সেনগুপ্তর আন্ডারে ভর্তি হয় ইন্দ্রাণী। তিনি জানান, যে রোগীকে রেফার করা হচ্ছে, তাঁকে কী চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়েছে, সেটা যদি স্পষ্ট ভাবে জানা যায়, তা হলে অন্যত্রও কাজটা করা সহজ হয়। ফোন ও কাগজপত্রের মাধ্যমে শিশুটির বিষয়ে জানতে পারায় পিজি-তেও সেই সুবিধা হয়েছে।