ভারতে করোনা সংক্রমণের প্রকোপ প্রাণ হারিয়েছেন বহু মানুষ। সরকারি পরিসংখ্যানের চেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছে একাধিক বিদেশি সংস্থা। এবার তা পুরোপুরি উড়িয়ে দিল মোদী সরকার। কেন্দ্রের যুক্তি, যে গাণিতিক মডেলের মাধ্যমে গণনা করে মৃত্যুর সংখ্যা নির্ণয় করা হয়েছে, তাতে খুব স্বল্প সংখ্যক নমুনা ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে তা ভারতের মতো বৃহৎ জনসংখ্যার দেশে নির্ভুল ফল দেয়নি। উল্টে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে জনমানসে ভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। কেন্দ্রের আরও দাবি, অন্যান্য বড় দেশের তুলনায় ভারতে প্রতি দশ লক্ষে করোনা সংক্রমণে মারা গিয়েছেন ৩৭৪ জন। এই সংখ্যা রাশিয়া, আমেরিকা, ব্রাজিলের মতো বড় দেশগুলির মধ্যে সব থেকে কম।
প্রসঙ্গত, গোড়া থেকেই ভারতের বিরুদ্ধে করোনা সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা কম করে দেখানোর অভিযোগ উঠেছিল। এর মধ্যে বেশ কিছু রাজ্য ধাপে ধাপে অনেক মৃত্যুকে করোনার কারণে মৃত্যু বলে স্বীকার করে নেওয়ায় মৃতের সংখ্যা মাঝে মধ্যেই লাফ দিয়ে বেড়ে যেতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু এই প্রবণতাই মৃতের প্রকৃত সংখ্যা লুকোনোর অভিযোগকে ক্রমাগত উস্কে দিয়েছে। ভারতে সরকারি হিসাবে করোনার কারণে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মারা গিয়েছেন ৫,১৬,৬৭২ জন। যদিও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থার দাবি, করোনায় সরকারি সংখ্যার চেয়ে বেশ কয়েক গুণ বেশি মৃত্যু হয়েছে ভারতে।
উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ব্রিটিশ জার্নাল ল্যানসেটে দাবি করা হয়েছে যে ভারতের করোনায় প্রকৃত মৃতের সংখ্যা সরকারি সংখ্যার চেয়ে অন্তত আট গুণ বেশি। ওই দাবির সারবত্তা কতটা, তা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের জানতে চেয়েছিলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ নাদিমুল হক। জবাবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ভারতী পওয়ার আজ রাজ্যসভায় লিখিত ভাবে জানান, এই ধরনের রিপোর্টগুলি বানানোর ক্ষেত্রে যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে, তা আদৌ স্বীকৃত নয়। ফলে মৃতের যে সংখ্যা ওই পদ্ধতিতে সামনে এসেছে, তা-ও ঠিক নয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, অধিকাংশ গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মৃতের সংখ্যা বিচারে ব্যবহৃত গাণিতিক মডেল খুব সামান্য সংখ্যক জনসংখ্যা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে সেই তথ্যকে ভারতের মতো বৃহৎ বৈচিত্রপূর্ণ দেশে প্রয়োগ করেছে। তার ফলে মডেলের মাধ্যমে পাওয়া মৃতের সংখ্যা ও সরকারি ভাবে মৃতের সংখ্যার মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে। তবে একাধিক সংস্থা দাবি করেছে, বহু রাজ্য নিজেদের অস্বস্তি এড়াতে কোভিডে মৃতের সংখ্যা কম দেখিয়েছে। এতে রাজ্যের ভাবমূর্তি ঠিক থাকলেও বাস্তবে দেশে মৃতের সংখ্যায় তৈরি হয়েছে বিস্তর গরমিল।