সারা দুনিয়ায় সব থেকে বড় এলাচ উৎপন্ন হয় এই বাংলার মাটিতেই। সত্যিই অবাক করা তথ্য। বাংলার ভাণ্ডারের বিবিধ রতনের সম্ভারে এই এলাচও অন্যতম। আরব দেশগুলি সাগ্রহে এই এলাচ কিনে নিয়ে যায়। পৃথিবীর অন্যান্য মহাদেশেও যায় এই সুগন্ধী মশলা। উৎকৃষ্ট মানের এই এলাচের সৃষ্ঠিভূমি হল কালিম্পং।পশ্চিম ভুটানের কাছে বাংলার শেষ প্রান্তে রয়েছে ছবির মতো দু’টি গ্রাম। একটির নাম তাংতা। অন্যটির নাম তোদে। সমুদ্রস্পৃষ্ট থেকে প্রায় সাড়ে চার হাজার ফুট উঁচুতে গ্রাম দু’টির অবস্থান। এখানেই উৎপন্ন হয় বিশ্বের সবথেকে বড় এলাচ। কালো গাত্রবর্ণের কারণে ‘কালো এলাচ’।চলতি নাম তার। যদিও এলাচের রং আদপে কালো নয়। হালকা গোলাপি রং এটির। পুরনো পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াকরণের সময় এই এলাচ কালো হয়ে যায়। তবে নেহাতই তা প্রযুক্তিগত অভাবের কারণে। সেই অভাব এবার দূর হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে। প্রযুক্তির অভাবে, তোদে ও তাংদার কৃষকরা যুগের পর যুগ কাঁচা এলাচ শুকনো করে আসছেন কাঠের জালের ভাটির (বড় মাটির উনুন) আগুনে। ভাটির আগুনে গোলাপি এলাচের রং ধীরে ধীরে কালচে হয়ে যেত। শেষে রং বদলে হয়ে যেত একেবারে কুচকুচে কালো। ফলে গুণগতমানে সর্বশ্রেষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও, এর উপযুক্ত দাম পেতেন না চাষীরা। এখন পরিস্থিতিতে বদল এসেছে।
উল্লেখ্য, বছর দেড়েক আগে এই সমস্যার দিকটি মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আসে। রাজ্যের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দপ্তর এখানকার চাষীদের নিয়ে একটি সমন্বয় গোষ্ঠী তৈরি করে। চাষের উন্নয়নের জন্য তৈরি করা হয় একটি ক্লাস্টার। কয়েকজন কৃষককে প্রযুক্তি শিখতে পাঠানো হয় অরুণাচল প্রদেশে। ওখানকার বড় এলাচ তোদে, তাংতার মতো গুণগতমানে ততটা উৎকৃষ্ট নয়। কিন্তু প্রযুক্তিগতভাবে অরুণাচল অপেক্ষাকৃত উন্নত। সেই কৌশল এখানে ব্যবহার করা যায় কি না, সেটি দেখতে পাঠানো হয়েছিল চাষীদের। সেসব দেখে এসে উন্নতমানের ‘ড্রাইং মেশিন’ বসানো হয় কালিম্পংয়ে। জমি দেয় জেলা প্রশাসন। খরচ পড়ে ২০ লক্ষ টাকা। ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করে প্রায় ১২০ জন এলাচ চাষীর। মেশিনের ব্যবহারের ফলে খুব সহজেই এখন শুকনো করা যায় বড় এলাচ। পাশাপাশি এর রং থাকে অবিকৃত। রাজ্যের এক আধিকারিক জানান, এই একটা মেশিনই দু’টি গ্রামের সমস্ত চাষি ব্যবহার করেন। আগে বড় এলাচ শুকনো করতে এঁদের সময় লাগত প্রায় ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা। এখন মেশিনে প্রতিদিন তিন হাজার কেজি এলাচ শুকোনো যায়। মূলত অক্টোবর-নভেম্বর মাসে চাষ হয় এই বড় এলাচ। বিক্রি হয় সারা বছর ধরে। এই বছর প্রথম, কালো নয়, হালকা গোলাপি রঙের এলাচ তৈরি হবে। দাম প্রায় ৮০০ টাকা প্রতি কেজি। কৃষক ফ্রান্সিস জেভিয়ার রাই বলেন, এতে আমাদের সমস্যার সমাধান হয়েছে। আমাদের এখন চেষ্টা সরাসরি রপ্তানি করার। রং বদলের আগে এই এলাচের চাহিদা ছিল আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু দেশে। এখন বিশ্বের অন্যান্য দেশও গোলাপি রঙের এলাচে আগ্রহী হবে, এমনটাই আশা করছেন তোদে ও তাংতার কৃষকরা।
