মুখ্যমন্ত্রী আসার আগে পর্যন্ত চোখের জল বাঁধ মানছিল না বগটুইয়ের মিহিলাল শেখ, বানিরুল সেখ, মফিজা বিবিদের। তবে বৃহস্পতিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানে পৌঁছেই স্বজনহারা মানুষগুলোর দুঃখটাকে ভাগ করে নিয়েছিলেন। আশ্বাস দিয়েছিলেন, পাশে থাকার, দোষীদের কঠোর শাস্তি দেওয়ার। পাশাপাশি ঘোষণা করেছেন ক্ষতিপূরণও। মুখ্যমন্ত্রীর ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর থেকেই চেনা ছন্দে ফিরতে শুরু করেছে বগটুই। আর ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ডের চার দিন পরে শুক্রবার সকালে দেখা গেল, উঠোনে ঝাঁট পড়েছে। খুলেছে বন্ধ দরজার তালা। স্কুলের পোশাকে গ্রামের রাস্তায় দেখা মিলল খুদে পড়ুয়াদেরও। সব মিলিয়ে সেই গুম মেরে থাকা পরিবেশও কিছুটা কেটেছে।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বগটুই গ্রামে এসে কড়া হাতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার কথা বলে যেতেই যে খানিকটা জড়তা কেটেছে, তা মানছেন গ্রামবাসীদের একাংশ। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই গ্রামে বসেছে পুলিশি পাহারা। ফলে, ধীরে ধীরে গ্রাম আরও স্বভাবিক হবে আশা বাসিন্দাদের। যে বাড়ি থেকে মঙ্গলবার সকালে সাতটি পোড়া দেহ উদ্ধার হয়েছিল, তার উল্টো দিকের বাড়িটিতে বুধবারও তালা ঝুলতে দেখা গিয়েছে। এ দিন সকালে গ্রামে পৌঁছে দেখা গেল, ওই বাড়ির কুমকুম বিবি পিছনের দিকের লোহার দরজা খুলে বাড়িতে ঢুকছেন। জানালেন, ঘটনার সময় দরজা আটকে বাড়িতেই ছিলেন। কিন্তু, তার পর দিন থেকে বাড়ি ছেড়ে আত্মীয়ের কাছে চলে যান। এখন দিনের বেলায় বাড়িতে এলেও রাতে ফিরে যাচ্ছেন।
ওই বাড়ির পিছনের দিকে রাজমিস্ত্রি মিঠু শেখকে এবং তাঁর স্ত্রী বলেন, ‘এই ক’দিন অন্য পাড়ায় কাটিয়েছি। কিন্তু, বাড়িতে তো ফিরতে হবে। দিদি আশ্বাস দিয়েছেন বলে বাড়ি এলাম। আমরা শান্তি চাই। তবে গ্রামের প্রাথমিক স্কুল বন্ধ থাকায় মেয়ে স্কুলে যাচ্ছে না।’ প্রাথমিক স্কুল না খুললেও ওই গ্রাম বা আশপাশের গ্রাম থেকে এ দিন রামপুরহাট শহরের স্কুলের পথে ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে দেখা গল। আগুনে পুড়ে যাওয়া ও ঘিরে রাখা বাড়ির পাশ দিয়েই তারা সাইকেলে গেল। মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার, ছবিটা ছিল না। অনেককে দেখা গেল বাজার থেকে বা মুদিখানা দোকান থেকে জিনিস কিনে বাড়ি ফিরছেন। কেউ বা কাজে বাইরে যাচ্ছেন। মঙ্গলবার থেকে গ্রামের দু’টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র বন্ধ থাকার ফলে এলাকার শিশুদের পুষ্টিকর রান্না করা খাবার দেওয়া বন্ধ ছিল। শুক্রবার একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চালু হয়েছে। আরও একটি কেন্দ্র শীঘ্র চালু হবে বলে আশা গ্রামবাসীদের।