দেশের পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পরেই তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার্তা দিয়েছিলেন যে, আঞ্চলিক দলগুলিকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কংগ্রেসের উপর নির্ভর করলে চলবে না। তাঁর দেখানো পথে হেঁটেই এবার রাজ্যসভায় বেনজিরভাবে অ-কংগ্রেসি বিরোধী ঐক্যের নিদর্শন তুলে ধরল তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের নেতৃত্বেই মোট ন’টি বিরোধী দল ইউক্রেন ফেরত পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণে একটি প্রস্তাব জমা দিয়েছে। তাতে কংগ্রেসের বহু জোটসঙ্গী সই করলেও কংগ্রেসের কোনও সাংসদের সই নেই।
উল্লেখ্য, ইউক্রেন ফেরত পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার বার্তা নিয়ে সোমবারই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবারই রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের কাছে ওই প্রস্তাব জমা দেয় তৃণমূল। জানা গিয়েছে, ওই প্রস্তাবে তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টি, আম আদমি পার্টি, এনসিপি, বাম, ডিএমকে, আরজেডি ও শিব সেনার মতো দলের সাংসদদের সই রয়েছে। কিন্তু কংগ্রেসের কোনও সাংসদের সই নেই। কংগ্রেস সূত্রের খবর, এনিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগই করেনি তৃণমূল। অর্থাৎ সচেতনভাবেই কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে বাকি বিরোধী দলকে একত্রিত করার চেষ্টা করেছে তৃণমূল। এ রাজ্যের শাসকদলের এই প্রস্তাবে সই করতে বলা হয়েছিল বিজু জনতা দলকেও। কিন্তু তারা শেষ পর্যন্ত সই করেনি। সোমবার রাজ্যসভায় টিআরএস এবং বিএসপির কোনও প্রতিনিধি ছিলেন না, তাই তাঁরাও সই করতে পারেননি। কিন্তু যাঁরা সই করেছেন তাঁদের মধ্যে ডিমএমকে, এনসিপি, শিব সেনা সরাসরি কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে আছে। সেটাও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
প্রসঙ্গত, সংসদে কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখার কৌশল অনেক আগে থেকেই নিয়েছে তৃণমূল। শীতকালীন অধিবেশনে বাকি বিরোধী দলগুলির সঙ্গে থাকলেও কংগ্রেসকে এড়িয়েই গিয়েছিল তৃণমূল। বাজেট অধিবেশনের প্রথম পর্বে সরাসরিই কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেছিল তারা। এবার তার থেকে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে গিয়ে কংগ্রেসকে বাদ দিয়েই বাকি বিরোধীদের জোটবদ্ধ করার পথে চলতে চাইছে তৃণমূল। কংগ্রেসকে বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে তৃণমূলের যুক্তি, কংগ্রেস যে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনী ফলাফলেই তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। বিজেপির সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা কংগ্রেসের নেই। রাজ্যসভাতেও তাদের সংখ্যা এপ্রিল মাস থেকেই কমতে শুরু করবে। জুন মাস নাগাদ তা কুড়িতে নেমে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।