আঞ্চলিক দলগুলিকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, কংগ্রেসের উপর নির্ভর করলে চলবে না। পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পরেই এই বার্তা দিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দেখানো পথে হেঁটেই তোড়জোড় শুরু করেছে তৃণমূল শিবির। জাতীয় স্তরের রাজনীতির ময়দানে এই ধরনের কিছু করার আগে সংসদেই তার মহড়া সেরে ফেলতে চাইছে তৃণমূল।
কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে আঞ্চলিক দলগুলিকে একছাতার তলায় নিয়ে আসার প্রাথমিক প্রক্রিয়াটা রাজ্যসভা থেকেই শুরু করতে চাইছে রাজ্যের শাসকদল। সেই লক্ষ্যেই সমাজবাদী পার্টি, আম আদমি পার্টির মতো দলের সঙ্গে খুব শীঘ্রই আলোচনা সেরে ফেলতে চাইছে তৃণমূল নেতৃত্ব। সংসদের চলতি বাজেট অধিবেশনে এই দুই দল তো বটেই, পাশাপাশি ডিএমকে, শিব সেনা, টিআরএসের মতো সমমনষ্ক দলগুলিকেও তৃণমূল এই আঞ্চলিক জোটে নিয়ে আসার চেষ্টা করবে বলে জানা গিয়েছে।
মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে কংগ্রেস আগামী দিনে রাজ্যসভাতেও কংগ্রেসের গুরুত্ব কমছে। এমনকী, লোকসভার মতো রাজ্যসভাতেও বিরোধী দলনেতার পদ হারানোর পূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে। সেই বিষয়টিকে সামনে রেখেই কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে আঞ্চলিক দলগুলিকে জোটবদ্ধ করার যুক্তিকে সামনে রেখে সকলের সঙ্গে আলোচনা করবে তৃণমূল।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক প্রথম সারির নেতা বলেছেন, “খুব শীঘ্রই এবিষয়ে আলোচনা শুরু হবে। আঞ্চলিক দলগুলির জোটবদ্ধ হওয়ার পূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের ফলাফল সামনে আসার পরে আপ এবং সপা কীভাবে শক্তিশালী হয়েছে তা আমরা দেখতে পেয়েছি। আগামী দিনে রাজ্যসভায় এদের আসন সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া, ডিএমকে ও আরও কয়েকটি আঞ্চলিক দল রয়েছে। তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে রাজ্যসভায় অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি একটি ব্লক তৈরি হতেই পারে।”
জুন মাস নাগাদ তা কুড়িতে নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানে তৃণমূলের ১৩ জন রয়েছে, আপের সংখ্যা বেড়ে ১০ হবে, সপাও আট থেকে নয়, অর্থাৎ এই তিন দল মিলিয়েই তিরিশের বেশি হয়ে যাবে। সেখানে কংগ্রেসকে সামনে রাখার কোনও প্রয়োজন নেই। বরং বাকি আঞ্চলিক দলগুলিকে পাশে পাওয়া গেলেই সুবিধা হবে।
সংসদে কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখার কৌশল অনেক আগে থেকেই নিয়েছে তৃণমূল। শীতকালীন অধিবেশনে বাকি বিরোধী দলগুলির সঙ্গে থাকলেও কংগ্রেসকে এড়িয়েই গিয়েছিল তৃণমূল। বাজেট অধিবেশনের প্রথম পর্বে সরাসরিই কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেছিল তারা। এবার তার থেকে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে গিয়ে কংগ্রেসকে বাদ দিয়েই বাকি বিরোধীদের জোটবদ্ধ করার পথে চলতে চাইছে তৃণমূল।
কংগ্রেসকে বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে তৃণমূলের যুক্তি, কংগ্রেস যে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনী ফলাফলেই তার স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। বিজেপির সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা কংগ্রেসের নেই। রাজ্যসভাতেও তাদের সংখ্যা এপ্রিল মাস থেকেই কমতে শুরু করবে।