সমস্ত বুথফেরত সমীক্ষাতেই ইঙ্গিত মিলেছিল এবার পাঞ্জাবে ক্ষমতায় আসতে চলেছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি (আপ)। বৃহস্পতিবার ভোট গণনা শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যায় মিলে যেতে চলেছে সমস্ত সমীক্ষা। শেষমেশ ঝাড়ুর ঝড়ে কার্যত সাফই হয়ে গেল কংগ্রেস৷ দিল্লীর পর প্রতিবেশী রাজ্যেও ক্ষমতা দখল করল আপ। কিন্তু কীভাবে এল এই সাফল্য? কোন অঙ্কে কংগ্রেসকে নাস্তানাবুদ করে পাঞ্জাব জয় আপের?
প্রসঙ্গত, দিল্লীর ‘কেজরিওয়াল মডেল’-এর সাফল্য একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছিল এবারের পাঞ্জাব বিধানসভা নির্বাচনে। পাশের রাজ্যে আপের পরপর দু’বার ক্ষমতায় থাকা, কেজরিওয়ালের ক্যারিশমা— এই সব কারণেই এবারের নির্বাচনে আপকে বেছে নিয়েছেন পাঞ্জাবের ভোটাররা। কংগ্রেস, বিজেপি, অকালি দলের মতো ‘ট্র্যাডিশনাল দল’ নয়, বরং তথাকথিত একেবারেই নতুন দল আপকেই বেছে নিয়েছেন তারা।
অন্যদিকে, নির্বাচনের ঠিক আগেই যেভাবে প্রকাশ্যে এসেছে কংগ্রেসের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, তা থেকেই যেন পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল দলের পরিস্থিতি। সেসব দেখেশুনেই যেন জনতা আর ভরসা রাখতে পারেনি হাতের ওপরে। প্রথমে ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং, পরে চরণজিৎ সিং চান্নি— এঁদের সঙ্গে নভজ্যোৎ সিং সিধুর দ্বন্দ্ব চরমে উঠতে দেখা গিয়েছিল। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা ছিল, এর বিরাট প্রভাব পড়তে চলেছে ভোটে। শেষ পর্যন্ত তাই হল।
আবার, কেন্দ্রের বিতর্কিত তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া কৃষক আন্দোলনে সেভাবে আন্দোলনকারীদের পাশে থাকতে পারেনি কংগ্রেস। বরং দিল্লী সীমান্তে বিক্ষোভরত কৃষকদের পাশে ছিলেন আপ কর্মী-সমর্থকরা। এর ফলে ক্রমশই জনতার বিশ্বাসভাজন হয়ে উঠেছে আম আদমি পার্টি। আর একই ভাবে জনপ্রিয়তা হারিয়েছে কংগ্রেস।
উল্লেখ্য, পাঞ্জাবে কার্যত প্রতি ৫ কী ১০ বছর অন্তর অন্তর ক্ষমতায় বদল হয়। কার্যত কয়েক দশক ধরেই এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সেই ক্ষমতা বদলের দৌড়ে একদিকে থাকে মূলত কংগ্রেস, অন্যদিকে থাকে শিরোমণি অকালি দল ও বিজেপি জোট। কিন্তু বারবারই দুই শিবিরের দিকে এই অভিযোগ উঠেছে, যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা ক্ষমতায় আসে তা তারা পূরণ করে না।
পঞ্চনদের দেশে ড্রাগের নেশা যেমন রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে তেমনি যুবসমাজের সামনে বেকারত্ব এক চরম অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি মাথা তুলে রাজ্যজুড়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছে মাটি মাফিয়ারাও। এই পরিস্থিতিতে পাঞ্জাববাসী যে একটা বড়সড় পরিবর্তন চাইছেন সেটা কিন্তু ৫ বছর আগেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল আপের ১২টি আসন প্রাপ্তিতে। বস্তুত পঞ্চনদের দেশে সেটাই ছিল আপের ভিত্তি গড়ে ওঠার ঘটনা। সেই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে ২০২২-এ রাজপ্রাসাদ গড়ল তারা।