সোমবার যে বুথ ফেরত সমীক্ষার ফল বিভিন্ন এজেন্সি প্রকাশ করেছে, তাতে বিজেপি সরকার টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকলেও তাদের আসন কমে যাবে বলে দাবি করা হয়েছে। এদিকে, বৃহস্পতিবার পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের বুথফেরত সমীক্ষার ফল প্রকাশের পরই রয়েছে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। আগামী ২৪ জুলাই মেয়াদ ফুরবে বর্তমান রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের। তাই আসন প্রাপ্তির যে আভাস সমীক্ষায় উঠে এসেছে তাতে স্পষ্ট পছন্দের মানুষকে রাষ্ট্রপতি ভবনে পাঠাতে খানিক বেগ পেতে হতে পারে বিজেপিকে। এখনও পর্যন্ত ঠিক আছে, উপরাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নাইডুকে বিজেপি তথা এনডিএ -র রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করবে।
প্রসঙ্গত, সদ্য ভোট হওয়া পাঁচ রাজ্য-সহ বাকি রাজ্যগুলিতে বিজেপির হাতে থাকা বিধায়ক এবং লোকসভা ও রাজ্যসভায় দলের সাংসদ মিলিয়ে রাষ্ট্রপতি ভোটে জয়ের জন্য বিজেপির হাতে এখন পঞ্চাশ শতাংশের কিছু কম ভোট আছে। পাঁচ রাজ্যের ভোটে সরকার গড়ার প্রশ্নে গেরুয়া শিবির মোটের ওপর স্বস্তিতে থাকলেও তাদের প্রাপ্ত আসন কমে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রয়োজনীয় ভোট আরও কমবে। ফলে আরও বেশি করে এনডিএ শিবিরের বাইরের দলগুলির কাছে হাত পাততে হতে পারে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদের। তাতে গেরুয়া শিবিরের কাছে কদর বাড়তে পারে আঞ্চলিক দলগুলির।
তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও সম্প্রতি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিজেপি ও কংগ্রেস বিরোধী দলগুলিকে নিয়ে জোট গোড়ার চেষ্টা শুরু করেছেন। তিনি নিজেও রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হতে পারেন। লক্ষণীয়, তিনি ইদানীং প্রধানমন্ত্রীকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ এবং তেলেঙ্গানা সফরে তাঁকে বয়কট করা সত্বেও নরেন্দ্র বিরোধীদের একাংশ অবশ্য চাইছে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে বিরোধী শিবিরের একমাত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করাতে। ওই শিবিরের অংক হল, সেক্ষেত্রে এক ঢিলে দুই পাখি মরবে। নীতীশের দল জেডিইউ-কে এনডিএ-র থেকে ভাঙিয়ে আনা যাবে। হারিয়ে দেওয়া যাবে বিজেপির প্রার্থীকেও। আরও বিপাকে পড়বে বিজেপি।
প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিধায়ক ও সাংসদরা ভোট দিয়ে থাকেন। তবে এক্ষেত্রে একটি ভোটের মূল্য এক নয়। রাজ্যসভা এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রত্যেক ভোটারের ভোটের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১৯৭১ সালের জনগণনার হিসাব ধরে। যে রাজ্যের জনসংখ্যা যত বেশি, সেই রাজ্যের ভোটের মূল্য তত বেশি। এই হিসাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে প্রত্যেক ভোটারের ভোট মূল্য হল দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি, ২০৮। সর্বনিম্ন হল, সিকিমে, ৮। এই পর্বে উত্তরপ্রদেশ ছাড়াও বাকি যে চার রাজ্যে ভোট হয়েছে তার মধ্যে পাঞ্জাব মাথাপিছু ভোটারের ভোট মূল্য ১১৬। উত্তরাখণ্ডের ৬৪, গোয়ার ২০ এবং মণিপুরের ১৮।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে গোটা দেশে মোট ভোটার ৪৮৯৬ জন। এঁদের মধ্যে লোকসভা ও রাজ্যসভার সদস্য সংখ্যা যথাক্রমে ৫৪৩ ও ২৩৩। বাকি ৪১২০ জন হলেন রাজ্য বিধানসভা ও বিধান পরিষদের সদস্য। এখন এনডিএ-এর বিধায়ক সংখ্যা ১৪৩১ জন। কংগ্রেসের হাতে আছে ৭৬৬ জন। বাকি১৯২৩ জন হলেন অবিজেপি-অকংগ্রেসি বিভিন্ন আঞ্চলিক ও জাতীয় দলের বিধায়ক। এনডিএ-র লোকসভা ও রাজ্যসভার সদস্য সংখ্যা যথাক্রমে ৩৩৪ জন ও ১০৩ জন। রাজ্যসভায় সরকারি শিবিরে ১২ জন মনোনীত সদস্য আছেন। কিন্তু তাঁদের ভোটাধিকার নেই।