উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচন যত পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে এগোচ্ছে ততই সিঁদুরে মেঘ ঘনিয়ে আসছে বিজেপির আকাশে। আর তার কারণ হয়ে উঠেছে গরু আর মোষ। শাসক বিজেপির কাছে ‘আওয়ারা পশু’ বা বিপথগামী গবাদি পশু এখন অশনি সংকেত হয়ে উঠেছে। উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে তা শক্তিশালী একটি ইস্যুও হয়ে উঠছে।
পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ প্রধানত একটি মহিষের বেল্ট। যত পুর্বদিকে অগ্রসর হবেন, দেখবেন গরু এবং বাছুরের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৯ সালের প্রাণিসম্পদ শুমারি অনুসারে আগ্রা (১০.৬৭ লক্ষ), বুলন্দশহর (৯.৭২ লক্ষ) এবং আলিগড়ে (৯.৪২ লক্ষ) মহিষের সংখ্যা।
তা গবাদি পশুর সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে, যা তিনটি জেলায় রয়েছে যথাক্রমে ২.৮৩ লক্ষ, ৩.০৪ লক্ষ এবং ৩.১১ লক্ষ। গোরখপুরে (২.৮৭ লক্ষ বনাম ২.৫৩ লক্ষ), দেওরিয়া (২.৮৮ লক্ষ বনাম ১.৯১ লক্ষ) এবং মির্জাপুরে (৫.১১ লক্ষ বনাম ২.৮৮ লক্ষ) মহিষের চেয়ে বেশি গরু রয়েছে।
বিপথগামী গবাদি পশুর দ্বারা ফসলের ক্ষতি যোগী সরকারের আগে বড় সমস্যা ছিল না। কারণ জবাইয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা তখন মূলত কাগজে ছিল। এখন তা প্রয়োগ হওয়ায় বিপথগামীদের অর্থাৎ ষাঁড়, পুরুষ বাছুর এবং দুধ না দেওয়া গরুগুলিকে কৃষকরা নিজেরাই ছেড়ে দেয়।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে। তা বর্তমানে রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। পশ্চিমের ‘মহিষ’ বেল্টের চেয়ে পূর্বে ‘গরু’ বেশি হতে পারে, কিন্তু ষাঁড়ের উত্তরোত্তর বৃদ্ধিতে এখানে ক্ষোভও বেশি।
মাঠের চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া খরচসাপেক্ষ
কৃষকদের শুধুমাত্র ফসলের ক্ষতির কারণেই নয়, পশুদের প্রবেশ ঠেকাতে মাঠের চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া তৈরি করাও খরচসাপেক্ষ।
এক বিঘার জন্য কেজি প্রতি ৮০-৯০ টাকা, ১০০ কেজি স্টিলের তার এবং তিন রাউন্ডের জন্য ৪০টি আরসিসি খুঁটি (২০০-২৫০টাকা প্রতি খুঁটির দাম) প্রয়োজন৷ এক বিঘার জন্য খরচ ১৬ হাজার টাকার উপরে আসে বলে জানান বাসভরাই পঞ্চায়েতের প্রধান জগনারায়ণ ভার্মা উল্লেখ করেছেন৷
ষাঁড়ের সমস্যা থেকে উদ্ধার পেতে গোশালার নিদান
বিপথগামী গবাদি পশু বা ষাঁড়ের সমস্যা থেকে উদ্ধার পেতে যোগী সরকার জানিয়েছে আরও গোশালা করা হবে। সেই গরুর আশ্রয়কেন্দ্র তৈরিতে সহায়তা করবে সরকার। কৃষকরা তাতে খুব বেশি প্রভাবিত হননি। কৃষকরা বলেন, ‘যদি আমি আমার পশুকে সেখানে নিয়ে যাই, তারা সরাসরি আমার কাছে দু-হাজার টাকা দাবি করবে। তারা টাকা নিয়ে এবং পশুদের ঠিকমতো খাবার না দিয়ে সরকারকেও লুঠ করবে।
উত্তরপ্রদেশ সরকার গোশালায় রাখা প্রতিটি পশুর জন্য প্রতিদিন ৩০ টাকা দিচ্ছে। কর্নেলগঞ্জের মাইজাপুরে গো-শালা বা আশ্রয় কেন্দ্র ২০২০ সালের অগাস্টে খোলা হয়েছিল। সেখানে ৫৭টি গাভী এবং ৪৫টি ষাঁড় রয়েছে। একটি গরু অনুৎপাদনশীল হলেও, প্রায় ৫ কেজি ভুসি (গমের খড়) এবং ১ কেজি গোটা ময়দা, গবাদি পশুর খাবার, চালের কুঁড়ো বা সরিষার খোল খায়। ভুসি এবং কুঁড়োর খরচ বর্তমানে প্রায় ১৬ টাকা প্রতি কেজি। ফলে কৃষকরা বিজেপির প্রতি ক্ষুব্ধ। তাঁরা বিজেপি-বিমুখ হয়ে সমাজবাদী পার্টির সমর্থনে গলা মেলাচ্ছেন। বিজেপির কাছে তা হয়ে উঠেছে মাথাব্যথার কারণ।
গবাদি পশু জবাইয়ে নিষেধাজ্ঞার প্রয়োগে
যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের কঠোরভাবে গবাদি পশু জবাই নিষেধাজ্ঞার প্রয়োগ করেছে। তা স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে।
বাস্তি জেলার হারাইয়া তহসিলের বাসভরাইয়ের কৃষক রামচন্দ্র ত্রিপাঠীর মতে, পাঁচ বছর আগেও তার গ্রামে বিপথগামী গবাদিপশু বা ষাঁড়ের অস্তিত্ব ছিল না। আজকে আমাদের কাছে ৫০-৬০টি ষাঁড় আছে। তিনি ৫০ বিঘায় আখ, ২২ বিঘায় গম, ১৮ বিঘায় সরিষা এবং বাকি ১০০ বিঘা জমিতে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি ও পশু চাষ করেন।
আওয়ারা পশু বা বিপথগামী পশুর সংখ্যাবৃদ্ধি
শিব প্রসাদ ভার্মা নামে এক কৃষক অভিযোগ করেন, ৫ বিঘার মধ্যে ৩ বিঘায় আমার গম নষ্ট করেছে। তিনি আরও ৩ বিঘায় সরিষা এবং ২ বিঘায় আখ চাষ করেন৷ পাঁচ বছর আগে, আমরা সবাই ‘গোহত্যা বন্ধ করুন’ স্লোগান দিয়েছিলাম এবং ২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচন এবং ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলাম।
তবে এবার আমরা ত্রিয়ম্বক নাথ পাঠকের (হারাইয়া থেকে সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী) পিছনে আছি। তার একমাত্র কারণ হল আওয়ারা পশু বা বিপথগামী পশু বা ষাঁড়। সুধীর কুমার তিওয়ারি মোট ২০ বিঘার মধ্যে ১০ বিঘায় গম, ৫ বিঘায় বেত, ৩ বিঘায় সরিষা এবং ২ বিঘায় মসুর চাষ করেন৷ তাঁরও সেই এক কথা।