বিজেপি শাসিত গুজরাত-কর্ণাটকে মেডিক্যাল শিক্ষায় যে গৈরিকীকরণের দেখা যায়, এবার তার ছায়া কলকাতা মেডিকেল কলেজের মতো ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও! যা নিয়ে ক্ষোভ ছড়ালো শাসক দলের অন্দরে। ক্ষুব্ধ নবান্নও। রাজ্য সরকারকে সম্পূর্ণ ভাবে অন্ধকারে রেখে কিভাবে ও কার নির্দেশে এই ঘটনা ঘটল তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে খুব দ্রুত এই ঘটনার জেরে মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ রঘুনাথ মিশ্রের কাছ থেকে কৈফিয়ত তলব চাওয়া হতে পারে। সেই রিপোর্টে সন্তুষ্ট না হলে তাঁর অপসারণের ঘটনাও এড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ঘটনার মূলে রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে একটি ভাইরাল ভিডিও। সেই ভিডিওতেই দেখা যাচ্ছে মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস পাঠ্যক্রমের ক্লাস শুরুর প্রথম দিন প্রথম বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের ‘চরক শপথ’ পাঠ করানো হচ্ছে। আর এই ঘটনা নিয়েই বিতর্ক ছড়িয়েছে। সূত্রের দাবি, ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
এমবিবিএস পাশ করে চিকিৎসক পেশার শুরুতে কনভোকেশনে বিশ্ব জুড়ে হিপোক্রেটিক শপথ নিতেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু মোদী জমানায় ন্যাশনাল মেডিকেল কাউন্সিল বা এনএমসি-র উদ্যোগে দেশের মেডিকেল কলেজগুলিতে হিপোক্রেটিক শপথের বদলে ‘চরক শপথ’ নিতে জোর দেওয়া হচ্ছে। যদিও সেই ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে চিকিৎসক ও ছাত্র সংগঠনগুলি। কিন্তু এবার খাস কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এবার ‘চরক শপথ’-এর ঘটনা ঘটে যাওয়ায় রাজ্য রাজনীতিতে তো বটেই, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরেও প্রবল আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। গোটা ঘটনায় যে খাস কলেজের অধ্যক্ষের মদত রয়েছে সেটা তাঁর মন্তব্যেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে।
কলকাতা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ রঘুনাথ মিশ্র নিজেই সংবাদমাধ্যমকে ঘটনার সত্যতা জানিয়ে বলেছে, ‘সাদা কোট পরে এনএমসি-র গাইডলাইন মেনেই চরকের নামে শপথ নেওয়া হয়েছে।’ আর এই গোটা ঘটনায় রাজ্য সরকার ও স্বাস্থ্য দফতরকে যে কিছুই জানানো হয়নি সেটা আবার সামনে এসেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যের বক্তব্যে। তিনি জানিয়েছেন, ‘চরক শপথ পাঠ করানোর ঘটনাটি শুনলাম। এমনটা যে হবে, আমাকে কেউ কিছুই জানাননি। এর বেশি আর কী বলব!’
ঘটনার জেরে তৃণমূলের অন্দরেও যে ক্ষোভ ছড়িয়েছে তা পরিষ্কার হয়েছে তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেনের বক্তব্যে। তিনি জানিয়েছেন, ‘বিষয়টি নিয়ে এনএমসি-র চেয়ারম্যান ও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছিলাম। ওঁরা জানিয়েছিলেন বিষয়টি ঐচ্ছিক থাকবে। তার পরে কী ভাবে কলকাতা মেডিকেল কলেজে এটা হল তা জানি না। পুরো বিষয়টাই যেখানে বিবেচনার স্তরে সেখানে কলকাতা মেডিকেল কলেজ কেন আগ বাড়িয়ে এই কাজটা করতে গেল বুঝলাম না।’