সম্প্রতিই পেশ হয়েছে কেন্দ্রীয় বাজেট। বাজেট ঘোষণার সময় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামানই হোন, বা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বারবার আত্মনির্ভর ভারতের বুলি আউড়ে গেছেন প্রত্যেকেই। জোর গলায় দাবি করেছেন, সবক্ষেত্রেই দেশীয় প্রযুক্তি, দেশীয় সম্পদের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বাড়ছে। মোদী সরকারের এই আওয়াজ যে কতটা সারবত্তাবিহীন, তার প্রমাণ মিলেছে ইসিএলের উৎপাদন পরিসংখ্যানের বেহাল পরিস্থিতিতেই। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার ৫০ শতাংশও ছুঁতে পারেনি কেন্দ্রের সংস্থা ইসিএল। গতবছর ইসিএলকে ৫২ মিলিয়ন টন কয়লা উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রা দেয় কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রক। এখনও পর্যন্ত তারা কয়লা উত্তোলন করতে পেরেছে মাত্র ২৫ মিলিয়ন টন। এই অবস্থায় সবচেয়ে বেশি চাপ বাড়ছে দেশের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির উপর। ইসিএলের কয়লার উপর দেশের ২৬ টি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্ভর করে। এই সংস্থার উৎপাদিত কয়লার ৯০ শতাংশই সেখানে যায়।
প্রসঙ্গত, এবার উৎপাদন অর্ধেক হওয়ায় ই-অকশন করার জন্য রাখা কয়লাও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিকে দিয়ে পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দেওয়ার চেষ্টা হয়। কিন্তু এবার বর্ষায় বিপুল পরিমাণ কয়লা সংকটের মুখে পড়তে পারে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি। তখন ফের বিদেশ থেকে কয়লা আমদানি বাড়াতে হবে আত্মনির্ভর ভারতের খোয়াব দেখানো কেন্দ্রীয় সরকারকে। ইসিএলের এক আধিকারিক জানান, “বাংলায় আমাদের প্রকল্প করতে গেলে তেমন কোনও বাধার মুখে পড়তে হয় না। বাংলা যথেষ্ট শিল্পবান্ধব বলেই আমরা মনে করি। কিন্তু ঝাড়খণ্ডে প্রকল্প নিয়ে বারবার সমস্যা হচ্ছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা রাজমহল প্রকল্প নিয়ে। এখানে জমি আন্দোলন মাথা চাড়া দিচ্ছে। এছাড়া চলতি বছরে মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টিপাতও উৎপাদনের ঘাটতির জন্য দায়ী।” ইসিএলের সিএমডির কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় বলেন, “এবছর অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে। যা উৎপাদনে ব্যাপক ঘাটতি এনেছে। এছাড়াও ঝাড়খণ্ডে রাজমহল প্রকল্প নিয়ে জটিলতা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে না পারার বড় কারণ। তুলনায় বাংলায় নতুন প্রকল্প করতে গেলে সমস্যায় পড়তে হয় না।”
উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় বাজেট নিয়ে সব মহল হতাশ হলেও বাজেটের বহু ছত্রেই আত্মনির্ভর ভারতের কথা বারবার শুনিয়েছে কেন্দ্র। দেশের নানা সরকারি ক্ষেত্র বেসরকারিকরণ করার যুক্তি হিসেবেও কেন্দ্রীয় সরকার দাবি করে, দেশের সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে বিদেশের প্রতি নির্ভরতা কমাতে নাকি এই উদ্যোগ। সেই লক্ষ্যে কয়লা ক্ষেত্রেও বহু বেসরকারিকরণ হয়েছে। কয়লা উত্তোলনের বরাত বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তারপরেও কাজের কাজ যে হচ্ছে না, তার প্রমাণ মিলল ইসিএলের উৎপাদনের ঘাটতিতে। জানা গিয়েছে, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি শীতকালে বাড়তি কয়লা সংগ্রহ করে রাখে। যাতে বর্ষাকালে কয়লা উত্তোলনে ঘাটতি হলে তাদের সঞ্চিত কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা যায়। কিন্তু এবার পর্যাপ্ত কয়লা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিকে সরবরাহ করতে পারছে না ইসিএল। তাই বর্ষাকালে পরিস্থিতি কী হবে তা যথেষ্ট চিন্তার। এছাড়া ই-অকশনের জন্য রাখা কয়লাও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে পাঠানোয় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা কয়লা পেতে সমস্যায় পড়ছেন। তাতে ছোট শিল্পের উৎপাদন ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কা মাথাচাড়া দিয়েছে।