বৃহস্পতিবার নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে আয়োজিত হল রাজ্যের প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠক। এদিন পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অমরনাথকে কড়া ভর্ৎসনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্দেশ দিলেন, রাজনৈতিক চাপে কাজ করতে কোনও অসুবিধা হলে যেন ওই আইপিএস সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে জানান। পাশাপাশিই, পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজির উদাহরণ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পুলিশ সুপারকে বলেন, “পূর্ণেন্দু তো কাজ করছে। ওকে দেখে শেখো!” পূর্ব মেদিনীপুর হল বিজেপি বিধায়ক তথা রাজ্যের বর্তমান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জেলা।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে তোলাবাজির অভিযোগে পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়ায় তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের নেতৃস্থানীয় দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর মুখে উঠে আসে সেই প্রসঙ্গ। তার আগেই মমতার তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়েন পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অমরনাথ। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ওই জেলায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু পুলিশ এ বিষয়ে নীরব। তিনি সরাসরি অমরনাথকে বলেন, “তোমার জেলা সম্পর্কে আমি অভিযোগ পাচ্ছি। কাউকে সাজিয়ে পরিকল্পিত ভাবে দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। অনেকদিন তোমাদের বলেছি। কিন্তু তোমরা কিছু করোনি। তার পর আমি হস্তক্ষেপ করেছি।”
এরপর অমরনাথ উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, “আমরা তদন্ত করে অ্যাকশন নিয়েছি ম্যাডাম। অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করেছি।” মুখ্যমন্ত্রী পুলিশ সুপারকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, “যারা দাঙ্গা করে তারা হিন্দু বা মুসলিম, কোনও ধর্মেরই নয়। কোনও কোনও পলিটিক্যাল লিডার পিছন থেকে ইন্ধন দেয়, তাই দাঙ্গা হয়। সুতরাং এটা তোমাকে কড়া ভাবে দেখতে হবে।” তার পরেই অমরনাথকে মুখ্যমন্ত্রীর সপাট প্রশ্ন, “তোমার কি ওখানে কাজ করতে ভয় করছে? তোমাকে কি গভর্নর ফোন-টোন করেন? এটা করবে না, ওটা করবে না, সেটা করবে না…। অবশ্য সেটা উনি বললেও তুমি এখন তো আর বলবে না। তবে তোমার ও সব দেখার দরকার নেই। মনে রেখো, তুমি রাজ্য সরকারের কাজ করছ।”
পাশাপাশি, ওই এসপিকে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “ভাল ভাবে কাজ করবে বলেই তোমাকে ওখানে দিয়েছিলাম। কিন্তু অভিযোগ পাচ্ছি। হলদিয়াতেও পেলাম এবং আমাকে বাধ্য হয়ে দু’জনকে গ্রেফতার করাতে হল। ওরা ধানুকা ও এক্সাইডের কাজ করতে অসুবিধা করছিল। তোমরা থাকতে আমাকে কেন হস্তক্ষেপ করতে হবে?” শেষে মমতা বলেন, “তুমি যদি মনে কর, তোমার ওখানে কাজ করতে গিয়ে রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়ছো, আমাকে সরাসরি বলতে পারো।” এরপর নিজের আসনে বসে পড়েন অমরনাথ।