বাংলার প্রতি মোদী সরকারের দুয়োরানিসুলভ আচরণ অব্যাহত। রোজনামচা সেই একই। বছর ঘুরল, তবুও গ্রামীণ সড়ক যোজনার এক কিলোমিটার রাস্তারও অনুমোদন দিল না কেন্দ্র। মোট ২ হাজার ২৮০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ৩৬৬টি রাস্তার জন্য অনুমোদন চেয়ে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে বিস্তারিত প্রজেক্ট রিপোর্ট (ডিপিআর) পাঠিয়েছিল রাজ্য পঞ্চায়েত দফতর। তাও পাঠানো হয়েছিল ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে। প্রস্তাবিত ওই রাস্তার জন্য খরচ ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। তারপর তিনবার কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিরা রাজ্যে এসেছেন। প্রকল্প খতিয়ে দেখে গিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু এতকিছুর পরও কেন্দ্রের তরফ থেকে কোনও হেলদোলই নেই। অথচ, আগের অর্থবর্ষেই ২৯৪টি, অর্থাৎ ২ হাজার ৫০০ কিমি রাস্তার অনুমোদন দিয়েছিল গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। তাতে খরচ হয়েছিল প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। ৬০ শতাংশ টাকা দিয়েছিল কেন্দ্র। বাকিটা রাজ্য। সেই কাজ একেবারে শেষ পর্যায়ে। প্রশ্ন উঠছে, আচমকা বাংলার বিধানসভা ভোটের পরেই এই উদাসীনতা কেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃতীয়বার ক্ষমতা দখলের পর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এই বঞ্চনা?
উল্লেখ্য, গ্রামীণ সড়ক যোজনা প্রকল্পে বাংলা গত কয়েক বছর ধরেই দেশের মধ্যে শীর্ষ স্থান দখল করে রয়েছে। বাংলার ভোটে বিজেপির স্লোগান ছিল, ‘ডবল ইঞ্জিন’ মডেল। সেই হাঁকডাক এরাজ্যে কোনোভাবেই প্রভাব ফেলেনি। ভরাডুবি হয়েছে ২০০ আসন দখলের স্বপ্নের। রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, এই শোচনীয় হার হজম হয়নি বিজেপির। তাই বাংলাকে নানাভাবে বেকায়দায় ফেলতে চাইছে। তারই একটা উদাহরণ, এক বছর ধরে কোনও রাস্তার অনুমোদন না দেওয়া। টাকা বরাদ্দ তো দূরঅস্ত, গ্রামীণ সড়ক যোজনার কাজ দেখতে আরও একবার কেন্দ্র টিম পাঠাচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। এর আগেও কেন্দ্রের প্রতিনিধিদল এসে সদ্য তৈরি হওয়া রাস্তা দেখে গিয়েছে। এমনকী, যে রাস্তা তৈরির জন্য প্রস্তাব রাজ্যের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে, সেই এলাকাও পরিদর্শন করেছে। পঞ্চায়েত দফতর সূত্রে খবর, বারবার খতিয়ে দেখেও বড় কোনও ত্রুটি তাদের নজরে আসেনি। সেই পালা শুরু হতে চলেছে আরও একবার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের আমলে গ্রাম বাংলায় ২৫ হাজার ৪০০ কিমি রাস্তা তৈরি হয়েছে। তার জন্য খরচ হয়েছে সব মিলিয়ে ১২ হাজার কোটি টাকা। রাজ্য চেষ্টা করেছে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রত্যেকটি গ্রামকে সড়ক যোগাযোগের আওতায় নিয়ে আসতে। কোনও রাস্তা চওড়া করা হয়েছে ৩.৭৫ মিটার, আবার কোনওটি ৫.৫ মিটার। এই প্রকল্পে এক কিমি রাস্তা তৈরির খরচ ৭০ থেকে ৭৫ লক্ষ টাকা। প্রতিটি রাস্তাই বিটুমিন দিয়ে তৈরি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লক্ষ্য একটাই, এ রাজ্যের প্রত্যেকটি গ্রাম পর্যন্ত রাস্তা পৌঁছে দেওয়া। আর তাতেও অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে কেন্দ্রীয় বঞ্চনা।